ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০১ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

কুসিক ভোটের ফল পাল্টানোর সুযোগ ছিল না: ইসি আলমগীর 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২২
কুসিক ভোটের ফল পাল্টানোর সুযোগ ছিল না: ইসি আলমগীর  ফাইল ছবি

ঢাকা: কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোটের ফল পাল্টানোর কোনো সুযোগ ছিল না বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর।  
কুসিকের চারটি কেন্দ্রের ফলাফল পরিবর্তনের অভিযোগ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে ইসি আলমগীর সাংবাদিকদের ব্যাখা দেন।

 
তিনি বলেন, ভোটগ্রহণ শেষে চারটি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার সময় কারচুপি করার রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার কোনো সুযোগ নেই। কেননা, প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোট গণনার পর তা ঘোষণা করেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। আর সেই রেজাল্ট শিটে প্রার্থীর এজেন্টদের স্বাক্ষর থাকে।

বুধবার (১৫ জুন) অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে মাত্র ৩৪৩ ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে হেরে যান দুইবারের মেয়র ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মো. মনিরুল হক সাক্কু।  
ভোটের ফলাফল প্রত্যাখান করে সাক্কু অভিযোগ করেন, ১০১টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা কালক্ষেপণ করেন। পরে ফল পাল্টে দেওয়া হয়।
 
নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল পাল্টে দিয়েছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন তো সরাসরি নির্বাচন পরিচালনা করে না। নির্বাচন পরিচালনা করে রিটার্নিং অফিসার। কেন্দ্র ঠিক করেন, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন ইত্যাদি। আসলে নির্বাচন (ভোটগ্রহণ) করেন প্রিজাইডিং অফিসার। তারা ফল প্রকাশ করে কেন্দ্রে ঘোষণা দেন। সেখানে বাইরে টানিয়ে দেন। সেখানে প্রার্থীর এজেন্টদের স্বাক্ষর থাকে। তাদের উপস্থিতিতেই কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করেন প্রিজাইডিং অফিসার। একটা কপি তাদের দেন। একটা মালপত্রসহ পাঠান রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে। আরেকটা কপি রিটার্নিং অফিসারের কাছে থাকে। রিটার্নিং কর্মকর্তা শুধু একীভূত করেন। উনার কাজ হলো কেবল পড়ে শোনানো। তাহলে ওনি কিভাবে পরিবর্তন করবেন। পরিবর্ধন করবেন, পরিমার্জন করবেন, সে সুযোগ আছে?
 
সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, রিটার্নিং অফিসার কেবল বেসরকারি ফলাফলে যোগ-বিয়োগ ঠিক আছে কিনা, সকলের স্বাক্ষর আছে কি-না, ইভিএমরে সঙ্গে মিল আছে কি-না। এরপর সে আমাদের কাছে পাঠায়। আমরা গেজেট প্রকাশের আগে দেখি, সেখানে ভুল থাকলে আমরা আবার ফেরত পাঠাই। তাই রিটার্নিং অফিসারের কাছে রেজাল্ট ম্যানিপুলেট করার সুযোগ নেই। কারণ প্রার্থীর এজেন্টদের কাছে কপি আছে। এরপরও কারো সন্দেহ থাকলে ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন।
কোনো সন্দেহ থাকলে পাসওয়ার্ড দিয়ে ইভিএম খুলে দেখা যাবে উল্লেখ করে ইসি আলমগীর বলেন, অনেকে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অপপ্রচার চালায়।
 
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে স্বার্থে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কুমিল্লার কোনো কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেইনি, যারা ওখানে কাজ করেন। এছাড়া যারা সিটির ভেতরে কাজ করেন তাদের কাউকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়নি। যাতে কেউ প্রভাব খাটাতে না পারে।
 
মো. আলমগীর বলেন, ১০৫টি কেন্দ্রের রেজাল্টই ঠিক আছে। এটা আসলে আগে দেখা হয় ঠিক আছে কি-না। ১০১টি কেন্দ্রের রেজাল্ট দেওয়ার পর প্রার্থীর সমর্থকরা এসে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলে। রেজাল্ট ঘোষণা যে দেবেন, কার কথা সে শুনে। তাই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, রিটার্নিং অফিসার এসপি, ডিসিকে ফোন করেন, আমাদের জানান। তারপর পরিবেশ সামাল দেন তারা। না হলে তো বলতো কী ঘোষণা দিয়েছে তা তো আমরা শুনিনি।
 
ভোটগ্রহণে বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইভিএম কোনো কোনো ক্ষেত্রে, সব ক্ষেত্রে নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। আমাদের সবাই তো একরকম নয়, অনেকেই বোঝেন না বয়স বেশি থাকে। এছাড়া বৃষ্টি ছিল। এসব কারণে ধীরগতি হয়েছে। আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয় নাই আপনাদের চোখ দিয়ে যা দেখেছি, সুন্দর সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে। যারা প্রার্থী ছিলেন, তারাও কিন্তু সেটা বলেছেন।  
 
ইভিএমের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হলো কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, নরমালি নগর এলাকায় যেসব ভোট আমি আগেও দেখেছি, তাদের সমাজের প্রতি রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব কম থাকে। অথচ তারাই শিক্ষিত বেশি, তাই ভোট কম পড়ে।
 
এমপি বাহারকে এলাকার ছাড়ার বিষয়ে চিঠি দিলেও তিনি কুমিল্লা সিটি ছাড়েননি। একজন এমপিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না, সংসদ নির্বাচনে এতো এমপিকে কি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী স্পিকার, সংসদ সদস্য; উনারা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। কেবল ভোট দিতে পারবেন। স্থানীয় হলে থাকতে পারবেন, যদি উনার ওখানে বাড়ি হয়। তবে বাইরের হলে পারবেন না।
 
চিঠিতে বলাই হয়েছিল, আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো। যেহেতু দ্বিতীয়বার একই কাজ করেছেন, তাই তাকে বিনীতিভাবে বলা হয়েছিল।
 
বাহার এলাকা না ছাড়ায় ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে-তা নিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অন্য সংসদ সদস্যের যাদের বলেছিলাম তারা কিন্তু সরে গিয়েছেন। কিন্তু উনার বাড়ি ওখানে। উনি ছিলেন। আমরা পড়াশোনা করি ১০০ নম্বর পেতে। কন্তু ১০০ না পেলেই তো ব্যর্থ বলতে পারি না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২২
ইইউডি/এসএ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।