সিলেট: পুলিশের কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। চুরি, ডাকাতি, মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা সামাল দেওয়া।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দুর্বিপাকে পড়া মানুষের ভরসার নাম এখন পুলিশ প্রশাসন।
মানুষের যখন ক্ষুধা লাগে বেঁচে থাকাটাই হয়ে উঠে শেষ কথা, তখন সৌন্দর্য উপলব্দিও লোপ পায়। জীবন ধারণে অন্ন সংগ্রহই হয়ে উঠে একমাত্র তাড়নার। আর বানভাসি মানুষের সেই ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভব করেই রান্না করা খাবার নিয়ে দুর্গত এলাকা চষে বেড়াচ্ছে সিলেট জেলা পুলিশ।
ভয়াবহ বন্যায় দুর্বিপাকে পড়া লোকজন যখন চরম খাবার সংকটে। তখন ভরসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। প্রতিদিন রান্না করা খাবার ও সুপেয় পানি নিয়ে যাচ্ছেন দুর্গত মানুষের পাশে। কর্মকর্তা থেকে সাধারণ কনস্টেবলও এখন মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বানভাসিদের।
গত ১৫ জুন থেকে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে প্লাবিত হতে শুরু করে সিলেট। ক্রমশ বন্যা পরিস্থিতি এতই ভয়ানক হয়ে উঠে মানুষের প্রাণ রক্ষা দায় হয়ে পড়ে। আর একমুঠো খাবার সেতো আকাশের ঝলসানো চাঁদের মতো। সেইসব এলাকায় বন্যার্তদের কাছে লাঠি বা বন্দুক হাতে অপরাধী ধরতে নয় বরং পুলিশ বাহিনী ঘরে ঘরে পৌঁছে প্রতিটি মুখে তুলে দিচ্ছেন আহার। তাদের রান্না করা খাবারে অনাহারে থাকা মানুষগুলোর মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠছে। ফলে পুলিশ দেখলেই পালানো নয়, ভরসাস্থল হিসেবে সান্নিধ্যে আসছে মানুষ।
সোমবার (২০ জুন) বন্যায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে রান্না করা খাবার বিতরণ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী।
পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে সিলেটের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একাধিক টিম গঠন করা হয় বিভিন্ন থানা এলাকায় অনাহারি বন্যার্তদের মধ্যে খাবার পৌঁছে দিতে।
এরমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শাহরিয়ার বিন সালেহ’র নেতৃত্বে গোয়াইনাঘাটে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ ও কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী, পুলিশ পরিদর্শক শ্যামল বনিকসহ একাধিক টিমে বিভক্ত হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা এলাকার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৬০০ জন বানভাসির মধ্যে রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে কানাইঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল করিম ও জেলা গোয়েন্দা শাখার (উত্তর) ওসি রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরীর সমন্বয়ে আরেকটি টিম জৈন্তাপুর থানার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫০০ বানভাসি মানুষের মধ্যে রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করেন। দীর্ঘ সময় আশ্রয়কেন্দ্রে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকার পর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার পেয়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
এছাড়া ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ওসমানীনগর থানা এলাকায় রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করেন।
জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে বিয়ানীবাজার থানার ওসি হিল্লোল রায়সহ একটি টিম বিয়ানীবাজার থানা এলাকায় প্রায় ১০০ জন বানভাসি মানুষের মধ্যে খিচুড়ি ও ২০০ জন মানুষের মধ্যে চাল, ডাল ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করেন।
গোলাপগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পরিত্রাণ তালুকদারের নেতৃত্বে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনূর রশিদ চৌধুরীর সমন্বয়ে একটি টিম থানা এলাকার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩০০ জন বানভাসি মানুষের মধ্যে রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করেন।
কানাইঘাট থানার ওসি মো. তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে থানা এলাকার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২৫০ বানভাসি মানুষের মধ্যে রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করা হয়।
বালাগঞ্জ থানার ওসি রমাপ্রসাদ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০০ বানভাসি মানুষের মধ্যে চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিশুদ্ধ পানি ও চাল বিতরণ করা হয়।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে থানার অফিসার ফোর্সসহ একাধিক টিমে বিভক্ত হয়ে থানা এলাকার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাদ্য বিতরণ করেন।
এ বিষয়ে সিলেট জেলার পুলিশ সুপার (পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে বানভাসি মানুষের পাশে আছে জেলা পুলিশ। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এমন মানবিক কার্যক্রমের ধারা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
এনইউ/আরবি