ঢাকা: রাত ১১টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও চুয়াডাঙ্গার ঈদ টিকিট পাননি সালাউদ্দিন আহমেদ। সঙ্গে ছিলেন তার এক বন্ধুও।
অথচ সিরিয়াল ছাড়াই হঠাৎ আসা কিছু লোকের টিকিট পাওয়াকে 'জাদু' বলছেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী।
রোববার (৩ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার সময় এ ঘটনা ঘটে কমলাপুর শহরতলী রেলওয়ে টিকিট কাউন্টারে।
নারায়ণগঞ্জে চাকরিরত সালাউদ্দিন ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে এসেছিলেন শনিবার রাত ১১টায়। তারপরও টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি রাত পৌনে ১১ টায় লাইনে দাঁড়িয়ে ১২৭ নম্বর সিরিয়াল পাই। আমার সিরিয়াল আসার আগেই বলে টিকিট শেষ। আমাদের লাইন থেকে সরিয়ে দেয়। তারপর আবার ৭ জনকে টিকিট দিল।
এছাড়াও হঠাৎ হঠাৎ টিকিট দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ১৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পাওয়া এ যাত্রী।
প্রসঙ্গত, চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে যাত্রা বিরতি দেয় সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস। তিনটি ট্রেনেরই অর্ধেক টিকিট অনলাইনে ও অর্ধেক স্টেশনে বিক্রি হচ্ছে। স্টেশন থেকে বিক্রি হওয়া টিকিটের পরিমাণ ১ হাজারের বেশি। অথচ সিরিয়ালের ১২৭ ও ১২৮ নম্বরের যাত্রীও টিকিট পাচ্ছেন না। টিকিট প্রত্যাশীরা প্রশ্ন তুলছেন, টিকিট যাচ্ছে কই?
অথচ টিকিট নেই জানিয়ে লাইন ফাঁকা করে দুপুর সাড়ে ১২টার সময় নিজেদের লোকদের লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট দেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের নিরাপত্তা কর্মী ও টিকিট কাউন্টারের বুকিং সহকারী।
ফলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ টিকিট প্রত্যাশীরা।
এ বিষয়ে টিকিট কাউন্টারে গণমাধ্যমের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বক্তব্য চাইলে দুর্ব্যবহার করেন টিকিট কাউন্টারের বুকিং সহকারী।
কীভাবে লাইন ফাঁকা করে আবার টিকিট দিচ্ছেন এর জবাবে এক বুকিং সহকারী বলেন, জাদু বুঝেন? জাদু দেখাচ্ছি।
অপর বুকিং সহকারী বলেন, গণমাধ্যমের লোক হয়েছেন তো কী হইছে? ভিডিও করছেন কেন? কে অধিকার দিয়েছে?
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রেলযাত্রীরা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তাকে পাননি।
বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক তাকে কয়েকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি, এমনকি তার অফিস রুমে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করলেও সেখানে তার সাক্ষাৎ মেলেনি।
তবে সকালে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে কিছু অব্যবস্থাপনা আছে বলে স্বীকার করেন স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার।
এর আগে নারী যাত্রীরাও একই অভিযোগ তুলে স্টেশন ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবার ঈদে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও ৫০ শতাংশ টিকিট কাউন্টারে এবং বাকি ৫০ শতাংশ টিকিট মিলছে অনলাইনে।
কাউন্টার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩ জুলাই ৭ জুলাইয়ের, ৪ জুলাই ৮ জুলাইয়ের এবং ৫ জুলাই ৯ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে।
স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাউন্টারে এবং অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা হবে। টিকিট কেনার পর যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি দেখিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
রেল সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট, কমলাপুর শহরতলী প্লাটফরম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, ৩ জুলাই, ২০২২
এনবি/এমএমজেড