বরগুনা: সামদ্রিক ইলিশের বাধাহীন প্রজনন ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। কিন্তু বরগুনার অনেক জেলেই মানছেন না এ নিষেধাজ্ঞা।
মৎস্য আইনের সংশোধনে ২০১৫ সালের ১৯ ধারায় প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ ধরার জলযানে মাছ শিকার বন্ধের আইন করা হয়। এ আইনের আওতায় গত ৩ বছর ধরে উপকূলের ইঞ্জিনচালিত কাঠের ট্রলারও আনা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য-২ (আইন) অধিশাখা এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনটিতে ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরের মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কে এম শফিউল কিঞ্জল বাংলানিউজকে জানান, কোস্টগার্ডের কাউকে ম্যানেজ করে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে মাছ শিকার করা হয় এমন তথ্য সঠিক নয়। তবে এমন ঘটনার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে জেলেদের দাবি, নৌ পুলিশ ও কোষ্টগার্ডের সোর্সদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই তারা গভীর সমুদ্রে যাচ্ছেন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে নৌ-পুলিশ।
পাথরঘাটার এলাকার সোহরাব মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা না মেনেই সাগরে মাছ শিকার করতে গিয়েছিলাম। গভীর বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় দেশীয় ট্রলারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভারতীয় ট্রলার মাছ শিকার করছে। আমরা আমাদের সীমানায় জাল ফেলে মাছের জন্য অপেক্ষা করলে ভারতীয়রা আমাদের তাড়িয়ে দেয়। তারা বলে, তোদের দেশে অবরোধ তোরা মাছ শিকার কর কেন?
কবির হোসেন নামে আরেক মাঝি বলেন, আমাদের জলসীমায় আমাদেরকেই মাছ ধরতে দেয় না ভারতীয় জেলেরা। অথচ তারা এসে মাচ ধরে। তাহলে শুধু আমাদের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লাভ কি?
এমন প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় অন্যান্য জেলেরাও।
বিভিন্ন জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কয়েকদিন আগে মংলায় নৌ-বাহিনীর অভিযানে ১৩৫ ভারতীয় জেলে আটক করা হয়েছে। কিন্তু পাথরঘাটায় কোস্টগার্ড নদীতে টহল না দিয়ে শুধু স্থলে অভিযান চালায়। আর তাদেরকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে অসাধু জেলেরা নির্ভয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করেন।
চরদুয়ানী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইশান জানান, নিয়মিত সমুদ্রে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জেলেরা নিজেদের বাঁচাতে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।
পাথরঘাটা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার দায়ে থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে উপকূলীয় এলাকায় রাতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জুনের শেষ দিকে তিন দিনে সাতটি ট্রলার আটক ও জব্দকৃত মাছ নিলামে বিক্রি করে সমপরিমান জরিমানা করা হয়েছে। এতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, জেলার মধ্যে সাগরের ইলিশ সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় পাথরঘাটা ঘাটে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২২
এফআর