ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ জুলাই ২০২৪, ২৪ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সদরঘাটে নেই চিরচেনা ‘সেই ভিড়’

গৌতম ঘোষ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২২
সদরঘাটে নেই চিরচেনা ‘সেই ভিড়’

ঢাকা: রাত পোহালেই সারাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা বা কোরবানির ঈদ। ফলে নাড়িরটানে পরিবারে সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ।

এবারের ঈদযাত্রায় ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। আগের মতো সেই চিরচেনা ভিড় নেই দক্ষিণবঙ্গের দিকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে। ফলে লঞ্চে ভোগান্তিহীন স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। যাত্রাপথের এই আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে পদ্মা সেতুর কারণে। সরঘাটে একদিকে নেই যাত্রীদের চাপ, অপরদিকে নেই লঞ্চে বাড়তি ভাড়া নেওয়ারও কোনো অভিযোগ। এবারের ঈদযাত্রাকে অকপটে নির্ঝঞ্ঝাটই বলেছেন যাত্রীরা।

শনিবার (৯ জুলাই) ঈদযাত্রার শেষ দিন সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রী ও লঞ্চের কর্মচারী-মালিকদের সঙ্গে কথোপথনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে গত ২৬ জুন। এর প্রভাব পড়েছে নৌ-পথে চলাচলকারী যাত্রী ও লঞ্চ মালিকদের ওপর। নৌ পথে যাত্রী অনেক কমে গেছে। সেই সঙ্গে যাত্রী না পাওয়ায় লঞ্চের ভাড়া কমিয়ে দিয়েছেন মালিকরা। এবার যারা লঞ্চে করে ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরেছেন তারা স্বস্তিতে যেতে পেরেছেন।

গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) থেকে সদরঘাটের লঞ্চগুলো ঘুরে দেখা যায়, নৌপথে এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে চলছে। চিরচেনা সেই হইচই আর নেই। লঞ্চের টিকিট পেতে নেই দৌড়ঝাঁপ-ধাক্কাধাক্কি, নেই ডেকে জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা। ফাঁকাও যাচ্ছে কেবিন। মানুষের ভিড়, টিকিট-কালোবাজারি এসব কিছুই দেখা যায়নি। মূলতঃ পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই বদলে গেছে লঞ্চঘাটের চিত্র। ফলে ফাঁকা কেবিন, আর কম যাত্রী নিয়েই ঢাকা ছাড়ছে দক্ষিণের লঞ্চগুলো।

এদিকে লঞ্চভাড়াও স্বাভাবিক দেখা গেছে। অন্যবার ভাড়া ৫০-১০০ টাকা বেশি রাখলেও এবার ভাড়া আগের মতোই রাখা হচ্ছে। উল্টো ছোট লঞ্চে কেবিনের ভাড়া ১০০-৩০০ টাকা কম নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা-বরিশালগামী কয়েকটি লঞ্চ ঘুরে দেখা যায়, প্রতি বছরের মতো এ বছর যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় নেই। বেশিরভাগ লঞ্চের কেবিন ফাঁকা। ডেকে যাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় যে যেভাবে পেরেছে শুয়ে-বসে আছে। যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হাঁকডাকে ব্যস্ত লঞ্চের স্টাফরা। ভাড়া নিয়ে দরকষাকষিও করছেন অনেক যাত্রী।

কয়েকটি লঞ্চের স্টাফ জানান, ঈদের সময় যাত্রীদের আমরা জায়গা দিতে পারি না। অথচ দেখেন অবস্থা। কয়েক ঘণ্টা ডাকাডাকি করে ডেকে অর্ধেক বা তার একটু বেশি যাত্রী ওঠে। কিন্তু কেবিনের অবস্থা আরও খারাপ। দেখা যায় ৫২টির মধ্যে প্রায় ২৫-২৬টি কেবিন বুক, বাকি সব ফাঁকা। প্রতি ঈদে যাত্রী সামাল দিতে নতুন লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়। কিন্তু এ বছর এখনো কোনো নতুন লঞ্চ চালু হয়নি।

ভোলাগামী লঞ্চ এমভি ফারহান-৭ এর কেরাণী মো. অপু বাংলানিউজকে বলেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রি আশানুরূপ নয়। ফ্যামিলি কেবিনগুলোর চাহিদা আছে। সিঙ্গেল কেবিনের টিকিট কেউ নিচ্ছেনই না। ডেকগুলো অনেকটাই ফাঁকা। লঞ্চের ধারণ ক্ষমতা ৬৩৯ জন অথচ ৬টা বাজে, ৩০০জন যাত্রীও হয়নি। এরকম অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ঈদের আগের দিন লঞ্চ ছেড়ে গেছি সেটা আমি গত ১০ বছরেও দেখিনি।

এমভি পারাবত-১২ লঞ্চের কেরাণী মো. নিজাম বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে মানুষ লঞ্চে এবার কম উঠছে। তবে গত দুই দিন যাত্রী মোটামুটি ভালো ছিল। আজ ঈদের আগের দিন যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা বাজে, অর্ধেক কেবিনও ভাড়া হয়নি। গত বছর সন্ধ্যার আগেই আমাদের ঘাট ছেড়ে যেতে হয়েছে। এবছর মনে হচ্ছে রাত ৯ টা পর্যন্ত বসে থাকলেও লঞ্চ ভরে যাত্রী নিতে পারবে না। গত ২৫ বছরেও আমি এতো ফাঁকা টার্মিনাল দেখিনি। তবে ঈদের পর যাত্রীরা আবার লঞ্চমুখী হবেন বলে আশা করছি।
 
কর্ণফুলী-১ লঞ্চের সুপারভাইজার সন্তুস মিত্র বলেন, আমার জীবনে বহু ঈদ দেখেছি। ঈদের আগের দিন গেটগুলো দিয়ে পন্টুনে আসা যাত্রীদের জায়গা দিতে পারতাম না। এবারে ঈদে তেমন সেই চিত্র নেই। যাত্রী স্বাভাবিক সময়ের মতো। ফলে মানুষ স্বস্তিতে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারছেন।

বরিশালের ঝালকাঠি যাবেন গার্মেন্টস কর্মী রাজিব। কোরবানি দেবেন গ্রামের বাড়ি। তাই দুপুরেই পরিবার নিয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসেছেন। তিনি বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর অনেক ভিড় থাকে, তাই আগেই এসেছি। টার্মিনাল দেখে আমি অবাক। ঈদের সময় এরকম ফাঁকা টার্মিনাল আমি কখনো দেখিনি। এমন শান্তির আরামের ঈদযাত্রা এর আগে আর কখনো হয়নি।

স্বস্তির ঈদযাত্রার একই কথা জানিয়েছেন বরিশালের যাত্রী মো. রনি হাওলাদার। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য আজকে আমাদের ঝামেলা পোহাতে হয়নি। এসেই লঞ্চে জায়গা পেয়েছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই পদ্মা সেতুর মতো একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। যার সুফল সারা দেশের মানুষ ভোগ করছে। এবারের ঈদ যাত্রায় সেটা প্রমাণ হয়েছে।

লঞ্চ মালিক সমিতির সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু লঞ্চ যদি ঈদ উপলক্ষে ভাড়া কমায়, সেটা তাদের ব্যাপার। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের যাত্রী ৩০ শতাংশ স্থায়ীভাবে কমে যাবে। তবে এ ঈদে পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকায় সেতু দেখার জন্য ৫০ শতাংশ যাত্রী সড়কে বাড়ি ফিরছেন। যারা সড়কে বাড়ি ফিরছেন তাদের ২০ শতাংশ আবার লঞ্চে ফিরবেন। আমাদের সাময়িক দুশ্চিন্তায় ফেললেওিআশা করি দ্রুতই যাত্রী বাড়বে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল বলেন, লঞ্চযাত্রা আরামদায়ক। লঞ্চে মানুষ কম খরচে, আরামে যাওয়া-আসা করতে পারে। পদ্মা সেতুর কারণে সড়কপথে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ হয়েছে। এতে লঞ্চে কিছুটা যাত্রী কমেছে। তবে তাতে এ খাতের ব্যবসায় তেমন প্রভাব ফেলবে না। যাত্রীরা আবার লঞ্চমুখী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনিও।

বিআইডব্লিউটিএর এর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, গত দুই দিনের তুলনায় আজ ঘরমুখী মানুষের চাপ তেমন নেই। পদ্মা সেতুর সুফলে মানুষ আজ স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারছে। পন্টুনে যাত্রীর তেমন কোন ভিড় নেই। যাত্রীদের চোখে মুখে প্রশান্তি দেখা গেছে। শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে গেছে ৮০টি লঞ্চ এবং ঘাটে এসেছে ৯৬টি লঞ্চ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, জুলাই ০৯,২০২২
জিসিজি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।