মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া নজরুল ইসলামকে দীর্ঘ ছয় বছর পর আটক করেছে র্যাব। এতোদিন তিনি ছদ্মবেশে ছিলেন।
রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরের দিকে সিপিসি-৩ মানিকগঞ্জ অঞ্চলের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৪ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারের বিষয়টি জানান কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আরিফুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, হরিরামপুর উপজেলার কদমতলার কোমেলা বেগমের ছেলে ইদ্রিস আলী রিকশা চালাতেন। ২০০৫ সালে ইদ্রিসের সঙ্গে মানিকনগর গ্রামের জোনাব আলীর মেয়ে সেলিনা বেগমের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে একটি মেয়ে ও একটি ছেলের জন্ম হয়। একপর্যায়ে ইদ্রিস ও সেলিনার মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে পূর্বপরিচিত আব্দুস সাত্তার তাদের বাড়ি গিয়ে স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ মেটানোর ছুতোয় সেলিনার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি সেলিনাকে দিয়ে স্বামীর নামে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা করান। মামলার কারণে সেলিনা ঘর সংসার ফেলে আদালতে যাতায়াত করতে থাকেন। সেলিনাকে ইদ্রিস অনৈতিক সম্পর্ক ও আদালতে যেতে বাধা দিলে স্বামীকে কৌশলে হত্যা করার জন্য আব্দুস সাত্তার, নজরুল ও দুলালের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেন সেলিনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর সেলিনা সন্তানদের নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তার রিকশায় করে বাবার বাড়িতে যান এবং মোবাইল ফোনে আব্দুস সাত্তার, নজরুল ও দুলালকে সেখানে আসতে বলেন। ইদ্রিস ও ওই তিনজন সেলিনার বাবার বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেন।
এরপর সেলিনা কৌশলে তার স্বামীকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর ইদ্রিস তার রিকশা চালিয়ে নিজের বাড়ির সামনে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সঙ্গে ছিলেন সেলিনা ও নজরুল। ওই সেলিনা ও নজরুল তাকে ধরাধরি করে ইদ্রিসের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে রাত ১২টা থেকে ২টার মধ্যে ইদ্রিসের গলায় রশি পেঁচিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যান আব্দুস সাত্তার, দুলাল, নজরুল ও সেলিনা।
এ ঘটনায় ইদ্রিসের মা কোমেলা বেগমের করা মামলার রায় হয় ২০১৬ সালে। রায়ে নজরুল ও সেলিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মামলা চলাকালে আব্দুস সাত্তারের মৃত্যু হয়। আরেক আসামি দুলালকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। ঘটনার পর জামিনে বের হয়ে এতোদিন ছদ্মবেশে ছিরেন নজরুল। গ্রেফতার এড়াতে নজরুল ঢাকা, আশুলিয়া ও সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতেন। এক জায়গায় বেশি দিন অবস্থান করতেন না। পরিচয় গোপনের উদ্দেশে প্রতিনিয়ত পেশা পরিবর্তন করতেন তিনি। কখনো ভ্যানচালক, কখনো কাঁচামালের ব্যবসা, সবজি বিক্রেতা কিংবা হোটেলের বয় হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২২
এসআই