টাঙ্গাইল : ‘গাড়ি চালাইয়া তেমন পয়সা পাওয়া যায় না। একটা ডাকাতি করলে ভাল টাকা পয়সা পাবা’ এমন কথা শুনে লোভে পড়ে টাঙ্গাইলের বাসে ডাকাতিতে অংশ নেন রাজা মিয়া।
শনিবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দী দেন রাজা। জানান, এক শ্রমিকের প্রস্তাবে ডাকাতিতে অংশ নেন তিনি। ডাকাতিতে ভালো পয়সা পাওয়া যায় বলে তাকে প্রলোভন দেখানো হয়। ডাকাতির পর তার ভাগে পড়েছে দুটি মোবাইল ফোন ও মাত্র ৩০০ টাকা।
রাজা মিয়ার জবানবন্দী রেকর্ডের পর টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আলম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তিনি এখন টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের বন্দী। আদালত ও পুলিশ সূত্রে রাজা মিয়ার জবানবন্দীর এ তথ্য জানা গেছে।
রোববার (৭ আগস্ট) রাজা মিয়ার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। আগে টাঙ্গাইল চন্দ্রা সড়কে ঝটিকা পরিবহনে একটি বাস চালাতেন। কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার ভোরে টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকা ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
রাজার জবানবন্দী
গত মঙ্গলবার দুপুরে তাকে প্রথমবারের মতো তাকে ফোন করে পূর্ব পরিচিত এক শ্রমিক। তাকে বলেন, গাড়ি চালাইয়া তেমন পয়সা পাওয়া যায় না। একটা ডাকাতি করলে ভাল টাকা পয়সা পাবা। এরপর ফোন রেখে দেন। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে তাকে আবার ফোন করেন ওই শ্রমিক। ডাকাতির জন্য প্রস্তুত কিনা জানতে চান। রাজা জানান, তিনি প্রস্তুত।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই শ্রমিক তিনজনকে নিয়ে (গ্রেফতার আওয়াল ও নুরনবীসহ) টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসেন। সেখানে তাদের সাক্ষাৎ হয় রাজার। তারা একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়া করে এলেঙ্গা পর্যন্ত যান। এলেঙ্গা বাজার থেকে চার-পাঁচটি চাকু ও কাঁচি কিনে ব্যাগে নিয়ে নেন। এরমধ্যে খবর আসে সিরাজগঞ্জের তাদের দলের অন্যরা পৌঁছে গেছেন। রাত ১১টার দিকে তারাও সিরাজগঞ্জ পৌঁছান। সেখানে আরও পাঁচজনকে দেখতে পান। ডাকাতি করা বাসে ওঠার আগে তারা তিন ভাগে ভাগ হন। বাসে উঠে রাজা মিয়া সামনের দিকে চালকের পাশে বসেন।
সিরাজগঞ্জ থেকে বাসটি ছাড়ার পর তাদের অন্য সহযোগীরাও বাসে ওঠেন। এক পর্যায়ে তারা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ নেন। রাজা মিয়া গাড়ির চালাতে থাকেন। পরে অন্য একজন এসে গাড়ির চালকের আসনে বসেন। তারপর রাজা মিয়া পেছনের আসনে গিয়ে নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করেন।
এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। মধুপুরের রক্তিপাড়ায় বাসটি সড়কের খাদে পড়ে যায়। তারা সবাই জানালা দিয়ে বের হয়ে মধুপুরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। একটি বাস এলে সেই বাসে উঠে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখান থেকে অটোরিকশা করে তাদের দলের একজনের নানীর বাড়ি যান। সেখানে লুণ্ঠিত টাকা পয়সা ও মোবাইল ভাগ-বাটোয়ারা করেন। রাজা মিয়া ভাগে দুটি স্মার্ট-ফোন এবং নগদ ৩০০ টাকা পান।
জবানবন্দীতে রাজা মিয়া আরও জানান, গত বুধবার সকাল ৬টার দিকে তিনি মধুপুর থেকে টাঙ্গাইল শহরের বাসায় চলে আসেন। পরদিন ভোরে গোয়েন্দা পুলিশের দল তার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় লুণ্ঠিত স্মার্ট-ফোন ও তার নিজের ব্যবহৃত মোবাইল নিয়ে নেয় পুলিশ।
রাজা মিয়া ছাড়াও গ্রেফতার অন্য দুই আসামি আওয়াল ও নুরনবী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তারাও দুজনও বাস ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু বাসের নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করেছিলেন কিনা সেটি স্বীকার করেননি।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণ মামলায় অপর আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব আসামিকে গ্রেফতার করবে পুলিশ।