পাথরঘাটা (বরগুনা): ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক চিরন্তন সত্য। রক্তের এ বন্ধন যে কতোটা নিঃস্বার্থ হয় তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট।
এমনই এক নমুনার দেখা মিলেছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের বেতমোর গ্রামে। সম্পত্তি দখল করার লোভে পড়ে নিজের ভাইকেই 'পাগল' করে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
কুঞ্জ সাধুর ছেলে ক্রিংকল (৩২) খুবই সাদাসিধে একজন মানুষ। একসময় তিনিও অন্যান্যদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন। কিন্তু তার ভাইয়ের সম্পত্তির প্রতি লোভের কারণে আজ মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী হতে হয়েছে ক্রিংকলকে। দীর্ঘ এক বছর ধরে পাগল আখ্যা দিয়ে শেকলে বেঁধে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করছেন তারই বড় ভাই সঞ্জয় কুমার হাওলাদারসহ তার পরিবার। এমন ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ক্রিংকলের জমিজমা দখল করতেই তাকে প্রায় এক বছর ধরে শেকলে বেঁধে নানাভাবে নির্যাতন করছেন বড় ভাই সঞ্জয় কুমার। নিজেদের বসত ঘরের পাশে তাকে বেঁধে রেখে খেতে দেন খাবারের উচ্ছিষ্ট। এভাবেই চলছে তার মানবেতর জীবন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি টিনশেড ঘরের ছাইছে পুরোনো চট বিছিয়ে ও পলিথিন টানিয়ে পুরোনো মশারির মধ্যে শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে ক্রিংকলকে। গোসলের ব্যবস্থা তো দূরের কথা, বাইরে টয়লেট করারও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি তার জন্য। আর ক্রিংকলের অবস্থা যেন শরীরে হাড্ডির সঙ্গে শুধু চামড়া লেগে থাকার মতো।
ক্রিংকলের সঙ্গে আলাপ হলে তিনি স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেন। তিনি বলেন, বড় ভাই সঞ্জয় কুমার আমার সম্পত্তি ভোগদখল করার জন্য আমাকে শেকলে বেঁধে রেখেছেন। প্রায় এক বছর ধরে আমাকে মেরে ফেলার জন্য তিনি বিভিন্নভাবে অত্যাচার করে আসছেন।
অসহায়ের মতো কান্না করে ক্রিংকল আরও বলেন, আমাকে বাঁচান। আমার পায়ের শেকল খুলে আমাকে একটু বাহিরের আলো দেখার সুযোগ করে দেন। আমি পাগল না। মিথ্যা পাগল সাজিয়ে আমাকে এভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে।
অভিযুক্ত সঞ্জয় কুমার হাওলাদারের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলতে পেরে খবর প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
পাথরঘাটার মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ নামে এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, শেকলে বেঁধে রাখাটা একেবারেই মানবাধিকার লঙ্ঘন। সম্পত্তির লোভে নিজের ভাইয়ের সঙ্গে এমন ঘটনার বিচার হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
এফআর