ঢাকা: ওয়ার্ড সভা করে স্থানীয় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ড চূড়ান্ত করার সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। এছাড়াও চূড়ান্ত তালিকা ওয়েব সাইটে প্রকাশ, শুধুমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ড সরবরাহ করাসহ মোট ১০টি সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন এই সুপারিশগুলো করে টিআইবি।
সংস্থাটির রিসার্চ ফেলো মোহাম্মদ নূরে আলম গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
সুপারিশগুলো:
ক. উপকারভোগী তালিকাভুক্তকরণ ও কার্ড বিতরণ:
১. জনপ্রতিনিধি কর্তৃক উপকারভোগীদের প্রাথমিক তালিকা তৈরির পর ওয়ার্ড সভার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে; এক্ষেত্রে নারী, প্রতিবন্ধীসহ ব্যক্তি, দলিত, আদিবাসী, প্রভৃতি প্রান্তিক ও দুর্গম এলাকার জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
২. উপকারভোগীর চূড়ান্ত তালিকা স্থানীয় পর্যায়ে (ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা সিটি কর্পোরেশন) প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। সারাদেশ থেকে সংগৃহীত মোট উপকারভোগীর তালিকা মন্ত্রণালয়/টিসিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
৩. শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করতে হবে এবং বিতরণের সময়, তারিখ ও স্থান ইত্যাদি তথ্য সব পর্যায়ে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. বিনামূল্যে তালিকাভুক্তি ও কার্ড বিতরণে অর্থ লেনদেন না করার বিষয়ে উপকারভোগীদের সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম (যেমন: এসএমএস প্রদান, ফ্যামিলি কার্ডে এ ধরনের তথ্য মুদ্রণ করে দেওয়া ইত্যাদি) পরিচালনা করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হলে কোথায় অভিযোগ জানাতে হবে তা প্রচার করতে হবে।
খ. সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রয় ও তদারকি:
৫. উপকারভোগীদের চাহিদা ও সামর্থ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে প্যাকেজে পণ্যের ধরন, পরিমাণ ও মূল্য নির্ধারণ করতে হবে; প্যাকেজভিত্তিক পণ্য বিক্রির পাশাপাশি অতি দরিদ্র ব্যক্তি যাদের প্যাকেজের সব পণ্য একসঙ্গে ক্রয়ের সক্ষমতা নেই তাদের চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী স্বল্প পরিমাণে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. পণ্যের গুণগত মান, পরিমাণ, কেন্দ্র/পয়েন্ট খোলা থাকার সময় এবং অবস্থান পরিবীক্ষণে ‘ট্যাগ টিম’-এর কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
৭. বিক্রয় কেন্দ্রের/পয়েন্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং এসব কেন্দ্র লক্ষিত জনগোষ্ঠীর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
গ. সচ্ছতা ও জবাবদিহি:
৮. প্যাকেজে পণ্যের ধরন, পরিমাণ, নির্ধারিত মূল্য, ইত্যাদি তথ্য বিক্রয়কেন্দ্রে প্রদর্শন করতে হবে; অভিযোগ দায়ের করার সুবিধার্থে টিসিবি/সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রপাপ্ত ব্যক্তির হটলাইন নম্বর/দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর, ইত্যাদি প্রদর্শন করতে হবে।
৯. তালিকাভুক্তি ও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রয় করার ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. উপকারভোগীর প্রণীত তালিকা ও তালিকা প্রস্তুত প্রক্রিয়া নিয়ে একটি স্বাধীন নিরীক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে, এবং ইতোমধ্যে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সচ্ছল পরিবারগুলোকে বাদ দিতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গবেষণায় দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের সক্ষমতা যাচাইপূর্বক যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি না নিয়েই দ্রুতি ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচিটি গ্রহণের ফলে বিভিন্ন পর্যায়ে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ছিল। এছাড়া সচ্ছলতার ঘাটতি ও অনিয়ম-দুর্নীতিসহ পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতার ঘাটতির ফলে একদিকে লক্ষিত উপকারভোগীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ফ্যামিলি কার্ড তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে।
অন্যদিকে উপকারভোগীদের চাহিদা, পণ্য কেনার সামর্থ্য, এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অভিগম্যতা ও অন্তর্ভুক্তির বিষয়গুলো যথাযথভাবে বিবেচনা না করায় দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে এই ইতিবাচক উদ্যোগের সুফল যথাযথভাবে পৌঁছায়নি, যা এই কর্মসূচির উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করেছে। আবার তথ্য প্রকাশ ও প্রচারে ঘাটতি থাকার কারণে লক্ষিত উপকারভোগীদের উল্লেখযোগ্য অংশ এই কার্যক্রমের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির শিকার হয়েছে।
এর পাশাপাশি কর্মসূচিতে অভিযোগ নিরসন, পরিবীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২২
ইইউডি/এএটি