ফরিদপুর: ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র ও মূল সড়কের (মুজিব সড়ক) ঝিলটুলী এলাকাতে ৩৪ একর জায়গার ওপরে ১৮২৫ সালে নির্মাণ করা হয় ফরিদপুর জেলা কারাগার। তার মধ্যে ৯ একর জায়গাতে বন্দিদের থাকার ব্যবস্থায় স্থাপনা ও বাকি ২৫ একর জায়গায় পুকুর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে।
কারাগারে বিপুল সংখ্যক বন্দি থাকলেও তাদের জন্য বরাদ্দ নেই কোনো চিকিৎসক। অসুস্থ হলেও কারাগারের ভেতরে নেই চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ। এমনকি বন্দিদের ডায়াবেটিস আছে কিনা তা জানারও কোনো ব্যবস্থা নেই।
প্রাচীন এই কয়েদখানায় বন্দিরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে টিনসেড একটি ঘরের। তাও আবার সেই ঘরটিও প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী।
জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে বিভিন্ন রোগ নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এক হাজার ৫০ জন বন্দি। তাদের মধ্যে বর্তমানে দুই জন বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া গত এক মাসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন একজন।
ফরিদপুরের কারাগারের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে থাকা ফার্মাসিস্ট আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে জানান, কম করে হলেও কারাগারে বন্দিদের জন্য দুই থেকে তিনজন চিকিৎসক দরকার। আর অসুস্থ বন্দিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য পৃথক একটি ভালো জায়গা দরকার। সেখানে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ব্যবস্থার পাশাপাশি তিন থেকে চারজন সেবিকা রাখা উচিৎ।
ফরিদপুর কারাগারের তত্বাবধায়ক আল-মামুন জানান, কারাগারের ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে ৪২০ জনের। কিন্তু বর্তমানে এখানে ৮৯৭ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারী কয়েদি রয়েছেন। যদিও এই সংখ্যাটি প্রতিদিন কম-বেশি হয়। তাদের জন্য বরাদ্দ সহকারি সার্জন পদটি এক যুগের বেশি সময় ধরে শূন্য রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্দিদের কেউ অসুস্থ হলে আমরা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। এছাড়া জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে এখানের জন্য একজন চিকিৎসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি মাঝে মধ্যে আসেন। এর বাইরে আমাদের একজন সিনিয়র ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। বন্দিরা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাইরে পাঠানোর জন্য তিনজন ফোর্স দিতে হয়। আমাদের লোকবল কম হওয়ায় এতে অন্য কাজের ব্যাঘাত ঘটে।
তত্বাবধায়ক আরও জানান, শুধু ফরিদপুর কারাগারের বাইরেও পাশ্ববর্তী অন্য জেলার কারাগার থেকে অসুস্থ বন্দিরা এখানে আসেন। এখান থেকে কারা বিধি নিয়মানুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য কারারক্ষীদের প্রহরায় সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ফরিদপুর কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, ফরিদপুরের কারাগারের ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি কয়েদি এখানে বন্দি রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে কর্তৃপক্ষের উচিত কারাগারের বন্দিদের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা নিশ্চত করা।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকার বলেন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে একজন চিকিৎসক কারাগারের সংযুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত কারাগার পরিদর্শন করা হয়। বন্দিদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়। বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২২
এফআর