ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

 ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে ছিল বরিশাল নগর!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২
 ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে ছিল বরিশাল নগর!

বরিশাল: বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ কেটে দেওয়ায় দুই রাত বরিশাল নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের সড়ক বাতিগুলো জ্বলেনি। এ সময়ে সন্ধ্যার পর থেকেই বাণিজ্যিক এলাকাগুলো ছাড়া নগরজুড়ে রাস্তাঘাট ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকারে।

এ দুই রাতে নগরবাসীকে অন্ধকারে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অন্ধকারে ছিল নগরীর সড়কগুলো। এদিকে সন্ধ্যা ৭টা পর থেকে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে সড়ক বাতি জ্বলতে শুরু করে। তবে নগরীর পাড়া ও মহল্লার সড়কে এখনো আলো জ্বলেনি।

বরিশাল নগরের বাসিন্দা ও যুব সংগঠনের নেতা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘুটঘুটে অন্ধকারের কারণে গত দুদিন সন্ধ্যার পরে বাসা থেকে বের হতে আমাদের ভয় করেছে। পাশাপাশি মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে তো প্রশ্নই থেকে যায়। হঠাৎ করে এভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ নগরবাসীকেই শাস্তি দিয়েছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বাংলানিউজকে বলেন, নগরীতে থাকা ১৬ হাজার সড়ক বাতির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এ সময়ে নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সেবা সচল রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বরিশালের পরিচালনা ও সংরক্ষণ সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না সিটি করপোরেশন। এতে বিলের হিসাবে বৃহৎ একটি অংক দাঁড়িয়েছে। সেই টাকা উত্তোলন করতে না পেরে মন্ত্রণালয়ের চাপের মুখেই সিটি করপোরেশনের সড়ক বাতির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

এ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ টি এম তারিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পাওনা পরিশোধে অসংখ্যবার সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন থেকে আশানুরূপ কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দাবি করেছেন বকেয়া বিল নিয়ে সম্প্রতি কিছু কথা তিনি শুনতে পেরে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য বলেছিলেন।

মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কথা বলায় সেখানে আমি আর কোনো কথা বলার সাহস পাইনি। কিন্তু আমাদের করপোরেশনে বর্তমানে নিজস্ব তহবিল ছাড়া কোনো অনুদানের টাকা নেই। আর তাই আমার কাছে এত অর্থও নেই যে, একবারে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করবো। তারপরও গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে প্রায় ৮০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছি। বিল দেওয়ার পরও সন্ধ্যায় এমন ঘটনা আমাদের বিস্মিত করেছে।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে সড়ক বাতি জ্বলছে না এমন খবর আমার কাছেও আসে। পরে সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে জানতে পারি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় কিছু সোলার বাতি ছাড়া সড়কে প্রায় ১৬ হাজার বাতির একটিও জ্বলছে না। ওই সময়ে ১১টি পানির পাম্প দিয়ে সাপ্লাই লাইনে পানি সরবরাহও বন্ধ ছিল।

তিনি আরও বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায় তাদের কিছু করার নেই। খুলনা থেকে লোক এসে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। যারা কেটেছে তাদের এখতিয়ার পুনরায় সংযোগ দেওয়া। আমি তাৎক্ষণিক বিষয়টি আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

এভাবে নাগরিকদের দুর্ভোগে ফেলে মেয়রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা চলছে জানিয়ে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, সড়কবাতি ও পাম্পের লাইন বিচ্ছিন্ন না করে আমার দপ্তরের কিংবা আমার বাসার লাইন কেটে দিতো, তাও নিজেকে বোঝাতে পারতাম। আগের মেয়রদের আমলের বকেয়ার টাকা তাদের সময় আদায় না করে এখন আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের সময় টাকা ছিল কিন্তু তখন তারা পরিশোধ করেনি। আর এখন অল্প অল্প করে বিল দেওয়ার পরেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তারপরও বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা আমি চালিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষ‌য়ে ব‌রিশাল সি‌টি কর‌পো‌রেশ‌নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বাংলানিউজকে ব‌লেন, অফি‌সিয়া‌লি এ মুহূ‌র্তে সড়ক বা‌তি জ্বলার বিষ‌য়ে আমি কিছুই জা‌নি না। রাত ৯টার দি‌কে বিষয় নিশ্চিত ক‌রে জানা‌তে পার‌বো।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।