ঢাকা: টিএসপি ও ডিএপি সার চাহিদার প্রায় চারগুণ এবং ইউরিয়া ও এমওপি চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ মজুদ থাকার পরও সার নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকার কথা জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক অতি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে সারের সমস্যা হবে না।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
কৃষিমন্ত্রী সেপ্টেম্বরের পর্যন্ত সারের তথ্য তুলে ধরে বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ইউরিয়া সারের চাহিদা থাকে ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে বর্তমানে মজুদ আছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ ইউরিয়া মজুদ আছে। এমনকি মজুদের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছরের একই সময়ে মজুদ ছিলো ৫ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। একইভাবে টিএসপি’র চাহিদা ৯৬ হাজার টন। এর বিপরীতে মজুদ আছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের একই সময়ে মজুদ ছিলো ৩ লাখ ৬৭ হাজার টন। ডিএপি বর্তমানে মজুদ আছে ৯ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। এ সারের চাহিদা ২ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর মজুদ ছিলো ৭ লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ এই দুই ধরের সার চাহিদার প্রায় চারগুণ মজুদ আছে।
এছাড়া বর্তমানে এমওপি মজুদ আছে ২ লাখ ৬৮ হাজার টন। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এই সময়ে এই সারের চাহিদা ১ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ চাহিদার দ্বিগুণের বেশি এমওপি মজুদ আছে। এমনকি এই মজুদের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছরের একই সময়ে এই সারের মজুদ ছিলো ১ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, আর কয়েকদিন পরেই রবি মৌসুম শুরু হবে। ১৫-২০ দিন পরেই আলু, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন রবি ফসল লাগানো শুরু হবে। আমাদের বোরোর জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারিতে আমাদের পর্যন্ত সরারের দরকার হয়। সেই সারের জন্য আমরা পর্যন্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
আগাম বন্য হওয়ার কারণে এ বছর বোরোতে বেশি কিছু ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আর একটা বিষয় যেটা প্রথমে আমাদের কাছে ধরা পড়েনি, পরে আমরা মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য পেয়েছি যে এ বছর মার্চ মাস থেকে বৃষ্টি শুরু হয়, এই মৌসুম অনেক আগেই শুরু হয় এবং বৃষ্টি হয়ে পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়ে। অনেক মানুষ সঠিকভাবে ধানগুলো সংগ্রহ করতে পারেনি। এতে উৎপাদন কম হয়েছে। ধান যখন মাঠে ছিলো আমাদের কৃষক ভাইরা মনে করেছিলো বিঘাতে ২০-২২ বা ২৫ মণ পাবে, কিন্তু যখন মাপছে তখন অনেক কম হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রায় দুই-আড়াই বছর করোনা এবং পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই দুটি মিলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কৃষির বিভিন্ন উপকরণ, সার, বিভিন্ন কেমিক্যালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। যেমন পটাশিয়াম ৩০০ ডলার প্রতি টন হওয়ার কথা, সেটা আমরা ১ হাজার ২০০ ডলারেও কিনেছি। আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা কমে এখনো প্রায় ৯০০ ডলারের কাছাকাছি। যেটা ৩০০ ডলার, সেটা কিভাবে ৯০০ ডলারে এফোর্ট করা সম্ভব? আমাদের মতো ছোট দেশ, গরিব দেশ।
মন্ত্রী বলেন, ৬০০ ডলারের একটা কন্টেইনার এখন ১ হাজার ৮০০ ডলার লাগে। গমের দাম সাধারণত থাকে আড়াই’শ ডলারের কাছাকাছি। গত ক্রয় কমিটিতে প্রায় ৫০০ ডলারের কাছাকাছি গম কেনার অনুমোদন দিতে হয়েছে। যখন গমের দাম বেশি থাকে তখন মানুষ চালের দিকে ঝোঁকে। আয় অনুযায়ী মানুষ একটু সমন্বয় করে। সবাই না, কম আয়ের মানুষ। আর এখন মানুষের গম খাওয়ার দিকে একটা ঝোঁকও আছে। গমের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়েছে।
ইউরিয়া সার ব্যবহার কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন, কিন্তু গতকাল দেখা গেলো আরো বেশি করে আদমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি ইউরিয়ার ব্যবহার কমিয়ে ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ানোর। ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ছে ঠিকই ১৫-১৬ লাখ টন। কিন্তু সরকারকে এখানে ভর্তুকি দিতে হয়। আমরা ১৬ টাকায় দিচ্ছি অথচ বাজারে ১৪০ টাকা। আর ইউরিয়াতে প্রতিকেজিতে ৬০ টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছি। প্রত্যেকটা সারে এ রকম ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছিলাম ইউরিয়ার ব্যবহার কমাতে। কিন্তু ইউরিয়া দিলে গাছ ভালো হয় এতে চাষি মনে করে ফলন ভালো হবে। আসলে এমনটা হয় না। ধানে ইউরিয়া বেশি ব্যবহার হলে চিটা বেশি হয়। কারণ ধানের পাতা কর্বোহাইড্রেট খেয়ে ফেলে। তাই দানায় কার্বোহাইড্রেট পৌছাতে পারে না। আর ডিএপি ব্যবহারে গাছের রোগ জীবানু কম হয়। গাছ শক্ত হয়, পটাশিয়াম বেশি পায়। কিন্তু আমাদের চাষিদের একটা প্রবণতা হলো রাতের অন্ধকারে হলেও ইউরিয়া দেবে। এ ক্ষেত্রে আমরা সফল হই নাই। যারা আমাদের মাঠকর্মী তাদের নির্দেশ দিয়েছি এ বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। তাদেরকে ইউরিয়া ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
আমন ধান নিয়ে কৃষি মন্ত্রী বলেন, আমাদের আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। কারণ বিলের বীজতলায় বৃষ্টি না হওয়াতে নিচু এলাকাতেও ধানের রোয়া (চারা) বপন করতে পেরেছে। এর পাশাপাশি একটা সমস্যাও আছে, বৃষ্টি না হওয়ায় চারা গাছ বৃদ্ধি পাচ্ছিল না। এখন বৃষ্টি হচ্ছে ফলে আমন দাঁড়িয়ে গেছে। এখন যদি বৃষ্টি হয় তাতে আমন ভালো হবে। তবে কিছু ক্ষতি হয়েছে বৃষ্টি দেরিতে হওয়াতে। ফলে গাছের পাতায় যথেষ্ট পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট তৈরি হবে না। তাতে কিছুটা উৎপাদন কম হবে। তবে আমরা মনে করছি উৎপাদন ভালো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২
জিসিজি