ঢাকা: কেউ পেঁয়াজ কুড়াচ্ছে কেউবা আবার আদা-রসুন। জীবন-বাস্তবতায় এসব কুড়িয়ে দিন চালায় রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা পুরান ঢাকার ওয়াজঘাট, শ্যামবাজার, ফরাশগঞ্জের কিছু দরিদ্র মানুষ।
এ এলাকাগুলো মূলত কাঁচামালের আড়ত। ফলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই থাকে হাকডাকের সরগরমে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে কিংবা নদী পথে ট্রলারে করে বস্তায় বস্তায় আসে আদা, রসুন, পেয়াজ ও অন্যান্য কাঁচামাল। এসব কাঁচামাল আড়তে তোলার সময় অনাকাক্ষিতভাবে কিছু পিয়াজ, আদা, রসুন পড়ে যায়। আর সেগুলো সুযোগ বুঝে কুড়িয়ে নিচ্ছে আশপাশের ভাসমান দরিদ্র মানুষ।
ফরাশগঞ্জ, শ্যামবাজার, ওয়াইজঘাট গিয়ে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গার নদীর তীরে লালকুঠি ঘাটের মোড় থেকেই আড়ত শুরু। ফরাশগঞ্জের বি কে দাশ রোড ধরে এগিয়ে এলে চোখে পড়ে বিভিন্ন পণ্যের সারিসারি আড়ত। সেখানে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, শুকনো মরিচ, হলুদ, ধনে, আলু ইত্যাদি ভোগ্য পণ্যের বস্তা সাজানো। বিভিন্ন সময় ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে পণ্য। এদিকে গলি পথ ধরে হেঁটে নদীর পাশে রয়েছে সবজির ছোট আড়ত। নদীপথে মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রলারে করে লাউ, ফুলকপি ইত্যাদি সবজি ঘাটে ভিড়ে এ আড়তে। বেশ কর্মচঞ্চল। সদরঘাটের দিকে এগোতেই পানের আড়ত। হাঁকডাক দিয়ে পান বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে গোটা ৫০টি পানের আড়ত রয়েছে। আর প্রতিটি আড়তের আশেপাশে হাতে পাটের তৈরি বস্তা নিয়ে ঘুরঘুর করছে দরিদ্র ভাসমান মানুষরা।
ফরাশগঞ্জ নদীপাড় গিয়ে দেখা যায়, ট্রলার থেকে কাঁচামাল নামানোর সময় পড়ে ময়লার মধ্যে পড়ে থাকা আদা-রসুন কুড়িয়ে নিচ্ছেন মাজেদা বেগম নামে এক বৃদ্ধা।
তিনি বলেন, আমার স্বামী নাই। ছেলে কুলির কাজ করে। আলাদা বাসায় থাকে। আমি বাসায় একা থাকি। তাই দীর্ঘ ৯ বছর যাবত আড়তগুলোতে পড়ে যাওয়া বা ফেলে দেওয়া কাঁচামাল কুড়িয়ে বিক্রি করি। বয়স হইছে কাজ করতে পারি না। সারাদিন এসব পড়ে থাকা পণ্য কুড়িয়ে নিয়ে সন্ধ্যায় রাস্তায় বসে বিক্রি করলে দেড়শ টাকার মতো পাই। আর যেদিন বিক্রি করতে না পারি সেগুলো বাসায় নিয়ে যাই নিজের খাওয়ার জন্য।
এসময় দেখা যায়, পাটের বস্তা নিয়ে বৃদ্ধরা ময়লা আবর্জনায় পড়ে থাকা কাঁচামাল কুড়াচ্ছে। কেউ আবার কুড়িয়ে পাওয়া পণ্য নদীর ময়লা পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করছে।
শ্যামবাজার আড়ত ব্যবসায়ী মুনসুর বলেন, শ্যামবাজারের মূল ব্যবসা পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদ ও শুকনা মরিচের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে এসব পণ্য আসে। যখন ট্রাকে করে এসব পণ্য আসে তখন পণ্যগুলো উঠানো নামানো সময় কিছু পড়ে যায়। কিন্তু সেগুলো আর কুড়িয়ে তোলা সম্ভব হয় না। কারণ কিছু দরিদ্র ভাসমান মানুষজন এগুলো পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তুলে নিয়ে যায়। তবে এসব পণ্য তোলায় আমাদের আড়তদারদের ভালো লাগে। কারণ তারা চুরি করে না। হয়তো এগুলো বিক্রি করে তাদের সংসার চলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২
এনএইচআর