ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নজর কাড়ছে ডাক্তারের ‘বোতল বাড়ি’ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
নজর কাড়ছে ডাক্তারের ‘বোতল বাড়ি’ 

বরিশাল: সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিদেশেও প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরির খবর পাওয়া যায়। সে রকমই প্লাস্টিকের রঙ-বেরঙের পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রামানন্দেরআঁক গ্রামের বাসিন্দা ও দন্ত চিকিৎসক পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ।

পাঁচকক্ষবিশিষ্ট এ বাড়িটির নির্মাণকাজ চলমান থাকতেই গোটা বরিশালজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এখন। ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বাকি থাকা বাড়িটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ যাচ্ছে সেখানে।

স্থানীয়দের অনেকের কাছেই বাড়িটি ‘বোতল বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত লাভ করে ফেলেছে। স্থানীয়রা বলছেন, শুরুতে পলাশের ইচ্ছের কথা শুনে কেউ তেমনভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। শুধু দেখেছেন ট্রাকে করে পলাশ প্লাস্টিকের বোতল বাড়িতে নিয়ে আসছেন। এরপর সেই বোতলগুলোর মধ্যে লোক দিয়ে বালু ভড়াচ্ছে, আর বলছে এ দিয়েই বাড়ি বানাবে। কিন্তু কীভাবে বাড়ি হবে তা তাদের নলেজেই আসছিল না।

স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন বলেন, প্রথমে ভ্রুক্ষেপ না করলেও যখন অবকাঠামোটা ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে যেতে থাকে, তখন সবাই অবাক হয়েছে। সবার মনের ভেতরেই অন্যরকম একটা অনুভূমি কাজ করতে থাকে। আশপাশের সবাই এখন বোতল বিল্ডিং দেখার মতো হয়েছে বলেই বলছেন। আশাপাশের বাজারঘাটে এখন এ নিয়ে কথাবার্তা, গল্প চলে। তিনি বলেন, আমিও ভেবেছিলাম কীভাবে কী করবে, কিন্তু এখন তো দেখতে ভালো লাগছে। বোতলগুলোর সঙ্গে কিছু জায়গায় গাঁথুনিতে ইটের ব্যবহার করা হয়েছে। আবার এসব গাথুনির ওপর ছাদ ঢালাইয়েরও প্রস্তুতি চলছে। এমনকি বাড়ি নির্মাণে পরিত্যক্ত বোতল ব্যবহারের বিরোধিতা যারা করেছিলেন তারাও নির্মাণকার্জ দেখে এখন খুশি।

পলাশের বাবা জ্যোতিষ চন্দ্র বাড়ৈ ও কমলীনি বাড়ৈ বলেন, কোথায় যেন দেখে এসে আমাদের কাছে পলাশ বোতল দিয়ে বাড়ি বানানোর কথা বলেন। কিন্তু তখন আমরা বারণকরে দেই। যদিও তার অনুরোধেই বাড়ি বানানোর অনুমতি দিতে রাজি হয়ে যাই। এখন তো দেখি ভালোই হয়েছে। আবার সবাই বাড়ি দেখতে আসছে এবং পলাশের প্রশংসাও করছে। এমনকি আশপাশের লোকের প্রশংসা শুনে এখন পলাশের স্ত্রী জুঁই রানি দাশের কাছে বিষয়টি বেশ ভালো লেগেছে। অভিনব পদ্ধতিতে বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকতে পেরে খুশি রাজমিস্ত্রী ও শ্রমিকরা।  

ওই কাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা জানান, বাড়িটি নির্মাণে ইটের বদলে প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতল আর বালু ব্যবহার করা হয়েছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলগুলোর মধ্যে বালু ভরে তা ব্যবহার করা হয়েছে বাড়ির দেয়ালের গাঁথুনি তৈরিতে। ইতোমধ্যে ইটের বদলে প্লাস্টিকের বোতল দিয়েই বাড়ির অধিকাংশ দেয়ালের গাথুনির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

রাজমিস্ত্রী মতি সিকদার জানান, ১০ বছর ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করি। বোতল দিয়ে বাড়ি বানানো এটাই প্রথম। পলাশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাড়ি নির্মাণ শুরু করি। কাজ যতদূর করা হয়েছে, তাতে নিশ্চিত বাড়ির নির্মাণ কাজ খুবই মজবুত। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়ির তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।

সার্বিক বিষয়ে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের উদ্যোক্তা পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ বলেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে এভাবে বাড়ি তৈরির প্রযুক্তিটা মূলত জাপানি। প্রযুক্তিটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। কারণ এই বাড়ির প্রতিটি দেওয়া শীতে গরম, গরমে ঠাণ্ডা থাকবে, ফলে বাড়ির ভেতরটাও আবহাওয়া অনুযায়ী বসবাসের উপযোগী হবে। এছাড়া প্লাস্টিকের বোতলগুলো ফ্ল্যাক্সিবল হওয়ায় এটা ভূমিকম্প রোধক হওয়ার পাশিাপাশি বুলেট প্রুভও। আর বাড়িটি ইটের থেকে ৮০ গুন বেশি শক্ত হবে বলে দাবি তার।
তিনি বলেন, ১ হাজার ৫২৫ স্কয়ারফিট বাড়িটির মাটির নিচে ফাউন্ডেশনের কাজে ১ লিটারের বালুভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করেছি। আর ওপরের দেয়ালগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে ২৫০ মিলিলিটারের বিভিন্ন কোমলপানীয় বালুভর্তি প্লাস্টিকের বোতল। সবমিলিয়ে ৪৮ মণ প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়েছে, যা গণনায় ৭০-৭৫ হাজার পিস হবে।

পাঁচকক্ষবিশিষ্ট এই বাড়িটি দোতলা করার ইচ্ছের কথা জানিয়ে দন্ত চিকিৎসক পলাশ বলেন, এসব বোতল কিনে তাতে বালু ভরে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এই সমপরিমাণ জায়গায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার ইটের প্রয়োজন হতো। সে হিসাবে অর্ধেকের বেশি খরচ আমার কম হয়েছে এখানে। পাশাপাশি বোতলগুলো পরিবেশেরও ক্ষতি করলো। যেখানে সেখানে ফেলে রাখলে প্লাস্টিক তো মাটি ও পরিবেশের ক্ষতিই করে।  

ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাকা বাড়ির চেয়ে অন্তত ৩০ শতাংশ কম খরচে স্বপ্নের এ বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন পলাশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকৌশলী শিপলু কর্মকার বলেন, এ ধরনের বাড়ি কতটা টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে বোঝা  যাবে। তবে এমন বাড়িতে খরচ কিছুটা কম হবে সেটা নিশ্চিত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
এমএস/এএটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।