ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জলাধার বন্ধ করে রাস্তা, জলাবদ্ধ ৬শ বিঘা কৃষি জমি

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
জলাধার বন্ধ করে রাস্তা, জলাবদ্ধ ৬শ বিঘা কৃষি জমি

সিরাজগঞ্জ: কৃষক রমজান আলী বছরের বিভিন্ন মৌসুমে নিজের ২৬ বিঘা  জমিতে ইরি-বোরো, সরিষা ও শীতকালীন সবজি চাষ করতেন। গত তিনমাস ধরে জলাবদ্ধতার কারণে সব জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে।

ফলে বেকার বসে রয়েছেন তিনি। শঙ্কায় আছেন বিশাল সংসার চালাবেন কীভাবে তাই নিয়ে।

অপরদিকে ৫ বিঘা জমি চাষাবাদেই চলতো আব্দুল কুদ্দুছের পরিবার। এবার আমন ধান রোপন করেছিলেন তিনি। কিন্তু জলাবদ্ধতায় পঁচে গেছে তার স্বপ্ন। আগামী ফসল চাষ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছেন দুঃশ্চিন্তায়।

রমজান আলী ও আব্দুল কুদ্দুছের মতো সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পুকুরপার গ্রামের শতাধিক কৃষকের অবস্থা এমনটাই। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে অনাবাদি হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের ৬শ বিঘা জমি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতায় এসব জমির পানি নিস্কাশনের একমাত্র জলাধারটি বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণ করায় এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের পুকুরপাড় ও ভেটুয়াকান্দি এলাকায় গেলে তিনটি মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা যায়। এসব জমিতে রোপন করা ধান পানিতে ডুবে পঁচে গেছে। টানা বৃষ্টিতে পুরো জলাবদ্ধ হয়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এসব জমি। আর আবাদ নষ্ট হওয়ায় এখানকার কৃষকরা পরিবারের কীভাবে চালাবেন তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।

ভেটুয়াকান্দির দরিদ্র কৃষক মজিবর সরকার তার তিন বিঘা জমিতে রোপন করেছিলেন আমন ধানের চারা। জলাবদ্ধতায় তার সব চারাই পচে গেছে। পরবর্তীতে সরিষা আবাদ নিয়েও রয়েছেন শঙ্কায়।

একই কারণে পুকুরপাড় গ্রামের সাইফুল ইসলামের ৫ বিঘা, আব্দুল কাদের ৬ বিঘা, ইয়াছিন আলীর ১২ বিঘা, দুলাল হোসেনের ১৬ বিঘা, আব্দুল কুদ্দুছের ৫ বিঘা, আব্দুল লতিফের ১৫ শতক, ভেটুয়াকান্দির আমির হোসেনের ৪ বিঘা, ছানোয়ারের ৬ বিঘা ও, শাহীনের ৩ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে।  

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অধিকাংশই প্রান্তিক ও হতদরিদ্র কৃষক। কয়েক বিঘা জমি চাষাবাদ করেই চলে তাদের সংসার। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতায় আবাদ বন্ধ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। জলাধার বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে বিপাকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।

যে ছয়বাড়িয়া গ্রামের জন্য এই কাঁচা রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেই গ্রামে বিকল্প রাস্তা আগে থেকেই ছিল। তারপরও কেন ক্যানেল বন্ধ করে রাস্তা করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন তারা।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, যে ক্যানেলটি বন্ধ করা হয়েছে সেটি দিয়ে তিনটি মাঠের পানি নিস্কাশিত হয়ে বারখাদি নদীতে যেত। ক্যানেলের মাথায় একটি বড় সেতুও রয়েছে। রাস্তা নির্মাণ করায় ওই সেতুর মুখও বন্ধ হয়ে গেছে। ক্যানেলটি দিয়ে এক সময় নৌকা চলাচল করতো বলেও দাবি বয়োবৃদ্ধ আনোয়ার হোসেনের।

জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার কৃষি সমৃদ্ধ ইউনিয়ন পূর্ণিমাগাঁতী। এখানে সারা বছরই ধান, পাট, গম, সরিষা ও শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়। এ ইউনিয়নের পুকুরপাড় ও পূর্ণিমাগাঁতী মৌজার বিস্তৃর্ণ ফসলি জমিতে রোপা আমনে পর শীতকালীন সবজি ও সরিষা এবং এরপর বোরো ধান চাষ করেন কৃষকরা। সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম তপন ২০২২-২৩ অর্থ বছরের কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ছয়বাড়িয়া গ্রামের কোল ঘেঁষে প্রবাহিত এলাকার একমাত্র জলাধার বন্ধ করে মাটির রাস্তা নির্মাণ করেছেন। অপরিকল্পিত এই রাস্তা নির্মাণের কারণে ২টি মৌজার ৪ গ্রামের প্রায় ৬শ বিঘা ফসলি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষকরা আপত্তি জানালেও তাতে কর্ণপাত করেননি ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে পানি নিস্কাশনের চন্য সরু পাইপ বসানো হয়। এতেও কোনো কাজ না হওয়ায় আন্দোলনে নামেন কৃষকরা।

পুর্নিমাগাতি ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম তপন বলেন, খাল বন্ধ করে রাস্তাটি তৈরির কারণে সামান্য কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে তা নিরসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার সুবর্ণা ইয়াসমীন সুমী জানান, ওই অঞ্চলে ৬শ বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও)জানানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।