মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা করোনার পর জাঁকজমকপূর্ণ পালনের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। দ্রুত গতিতে চলছে প্রতিটি মণ্ডপে প্রতিমা সাজানোর কাজ।
হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের পূজা মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তের সাজ-সজ্জার কাজ এগিয়ে চলছে। সর্ববৃহৎ এ পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুতি চলছে প্রতিটি মণ্ডপে।
পূজামণ্ডপগুলোতে একের পর এক প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি প্রতিমাকে সাজিয়ে তুলতে প্রতিমাশিল্পীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে দিন-রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
চিত্ত রঞ্জন ও জয় দেব নামে প্রতিমাশিল্পী জানান, মূর্তি তৈরির জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে হতাশা। বিগত বছরগুলোতে মাটি, খড়, বাঁশ, দুর্গা প্রতিমাসহ অন্যান্য দেবদেবীর শাড়ি, চুড়ি আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কম থাকলেও এ বছর সেটা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। তবে প্রতিমা তৈরি আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল না থাকায় অনেক প্রতিমাশিল্পী শুধু মজুরি ভিত্তিতে কাজ করছেন।
মৌলভীবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মহিম দে জানান, গত ২ বছর করোনার কারণে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করতে পারেননি। তবে এবার জেলায় সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তারা আশাবাদী। প্রতিটি মণ্ডপের ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
অপরদিকে শহর ছাড়াও শহরের বাইরে চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা এবং গ্রামগঞ্জের মণ্ডপগুলোতে তারা নিজেদের উদ্যোগে বিদ্যুতের ব্যবস্থাসহ পূজার পাঁচদিন মণ্ডপ পাহাড়ার জন্য কমিটি করা হয়েছে।
জেলার ছয়টি স্থানে অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও ব্যতিক্রমী আয়োজনে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। স্থানগুলো হচ্ছে- রাজনগরের পাঁচগাঁও, কুলাউড়ার কাদিপুরে শিব মন্দির, সদর উপজেলার ত্রিনয়নী, আবহান, মহেশ্বরী ও শ্রীমঙ্গলের রূপসপুর মণ্ডপ।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, এবার ১০০৭টি মণ্ডপ থাকায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সবকটি উপজেলায় নেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পাঁচদিনের বৃহৎ এ পূজাকে ঘিরে বড় বড় মণ্ডপগুলোতে দিন-রাত মিলিয়ে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। ফলে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৮২টি পূজামণ্ডপসহ আইনশৃঙ্খলার সার্বিক নিরাপত্তায় ৭৪৭ জন পুলিশ সদস্য এবং ৬ হাজার ৮২০ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। তাছাড়া সাদাপোশাকে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম।
প্রশাসন সূত্র জানায়, দুর্গাপূজা সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণভাবে পালনের লক্ষ্যে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা সভা করেছেন। প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপের আশপাশের সব ধর্মের লোকজনদের নিয়ে সম্প্রীতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
আয়োজকরা জানালেন ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে জেলায় সার্বজনীন ও ব্যক্তিগত মিলে মোট ১০০৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০৮টি, রাজনগর উপজেলায় ১২৮টি, কুলাউড়া উপজেলায় ২২০টি, জুড়ী উপজেলায় ৭২টি, বড়লেখা উপজেলায় ১৫১টি, কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৬০টি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মোট ১৬৭টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছর জেলায় সরকারিভাবে প্রত্যেকটি সার্বজনীন পূজামণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
বিবিবি/আরবি