ঢাকা: পদ্মা রেল সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ উদ্বোধন করার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি কাজ।
আগামী বছরের জুনে এই সেতু চালু করা লক্ষ্য নিয়ে গত ২০ আগস্ট লাইন বসানোর কাজ উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম।
জানা গেছে, নকশা এখনও চূড়ান্ত হয়নি, ফলে আটকে আছে রেল ট্র্যাক বসানোর কাজ।
রেললাইন বসানোর কাজের উদ্বোধনের সময় রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেছিলেন, আগামী বছরের জুনে কমলাপুর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
কিন্তু ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু দিয়ে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়নি। এতে করে নির্ধারিত সময়ে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা গেছে।
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে কথা বলতে ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকল্প পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, নকশা চূড়ান্ত করার পর্যায়ে আছে। নকশা চূড়ান্ত হলেই পদ্মা সেতু দিয়ে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হবে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে। তাহলে আগামী বছরের জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করা যাবে।
তবে আনুষাঙ্গিক কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজাইনের মূল কাজের বাইরে আনুষাঙ্গিক কাজ এগিয়ে চলছে। আর পুরো প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬১.৫ শতাংশ বলে জানান তিনি।
পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পে কর্মরত এক শ্রমিক বলেন, গত মাসেই সেতু দিয়ে রেললাইন বসানোর কথা থাকলে এখন পর্যন্ত সেতু দিয়ে রেললাইনের কাজ শুরু হয়নি। তবে কিছুদিনের মধ্যে হতে পারে বলে জানান তিনি।
পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর। শুরুতে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চালুর দিনই ট্রেন চলাচল শুরুর পরিকল্পনা ছিল সরকারের।
কিন্তু সময়মতো কাজ এগোয়নি বলে এখন পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশ ২০২৩ সালের জুনে চালুর কথা রয়েছে। এরপর ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে যশোর পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করার কথা।
শুরুতে যানবাহন চলাচলের সঙ্গে একই দিনে রেল চালুর পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু রেললাইন বসানোসহ সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণের কাজ পিছিয়ে আছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে সরকারের সেতু বিভাগ। সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলাদেশ রেলওয়ের।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ফলে যোগাযোগের ত্রিমাত্রিক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। এর সুবিধা শুধু ওই এলাকার মানুষই নয়, পুরো দেশ পাবে।
বর্তমানে খুলনা, যশোরসহ দেশের পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় রেল যোগাযোগ আছে। তবে ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে ওইসব এলাকায় যেতে হয়। ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব ৩৮১ কিলোমিটার।
'পদ্মা সেতু দিয়ে যে রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমে যাবে। এছাড়া, এই রেল ব্যবস্থার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ সম্প্রসারিত হবে। দেশের জিডিপি ১.২৩ শতাংশ বাড়বে। ’
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে রেল যাওয়ার পর আরো যেসব সুফল পাওয়া এখনো বাকি আছে সেগুলো রেললাইন চালু হওয়ার পর পাওয়া যাবে। এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে অংশের শেষ হওয়ার কথা সেটি সেই সময়ের মধ্যে হওয়ার দরকার।
এটি বুঝতে হবে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের কাজ। এই সব কাজে নির্ধারিত যে সময় শেষ করার কথা থাকে, সে সময়ের মধ্যে শেষ না হলে নানা রকম সমস্যায় পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেন ড. হাদিউজ্জামান।
প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন বসানো এবং স্টেশন ও অন্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
একই সঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-পাচুরিয়া-রাজবাড়ী পর্যন্ত রেলপথটি ব্যবহার করে এসব অঞ্চলের মানুষ ঢাকার সঙ্গে সহজেই যাতায়াত করতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
এনবি/এসআইএস