ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চারপাশে বেওয়ারিশ কুকুরের পাশাপাশি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিড়ালের উৎপাত বেড়ে গেছে। বিড়ালগুলো কয়েকজন রোগী, রোগীর স্বজন ও চিকিৎসককে কামড় ও আচড়ও দিয়েছে।
এসব কুকুর-বিড়ালের উৎপাত থেকে প্রতিকার পেতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি নিজেরাও নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
রোববার (২ অক্টোবর) হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালের চারদিকে হঠাৎ বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। কুকুরগুলোর কারণে রোগী ও স্বজনদের মাঝে ভয়ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। ডাক্তার ও রোগীসহ জনসাধারণের চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। কুকুর নিধনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিটি কর্পোরেশনের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিড়ালের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ কুকুরসহ বিড়ালগুলো তাড়াতে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছে। বেশ কয়েকদিন আগে পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ওয়ার্ডে ফাঁদ তৈরি করে ২১টি বিড়াল ধরে উন্মুক্ত স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হাসপাতালের পুরাতন ভবনের একটি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগী আয়শা আক্তার বলেন, এই ওয়ার্ডে বেশ কয়েকটি বিড়াল আছে। বিড়ালগুলো হঠাৎ হঠাৎ আমাদের খাবার খেয়ে ফেলে। হঠাৎ পায়ে খামচি অথবা কাউকে কামড় দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিছু দিন আগে বিড়ালের কামড় খেয়ে এক রোগীর স্বজন মহাখালীতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলার ওয়ার্ড মাস্টার শরিফুল ইসলাম জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে বেশ কয়েকদিন আগে ফাঁদ পেতে ২১টি বিড়াল ধরা হয়েছিল। সেগুলোকে সুরক্ষিতভাবে একটি বাক্সে বন্দি করে রাজধানীর পাশে কেরানীগঞ্জের উন্মুক্ত স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিড়াল ধরার অভিযান এখনও অব্যাহত আছে।
রোববার (০২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন ভবনের নিচতলায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে অনেকগুলো বিড়াল দেখতে যাওয়া যায়। খাবারের সন্ধানে রোগীদের বিছানার নিচে অথবা আশপাশে হাঁটাচলা করছিল বিড়ালগুলো। এমনকি রোগীদের রান্নার স্থলেও একসঙ্গে ৫/৬টি বিড়াল ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।
পুরাতন ভবনের নিচতলার ১০৬ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নকর্মী বিলকিস বলেন, বিড়ালের জ্বালায় রাতে কেউ ঘুমাতে পারে না। যেখানে সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ করে। এছাড়া রোগীদের খাবার-দাবার খেয়ে ফেলে। কিছুদিন আগে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত এক ডাক্তারকে কামড় দিয়েছিল।
হাসপাতালের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের দৈনিক মজুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত নাজমা জানান, এই ওয়ার্ডে ১৫ থেকে ২০টি বিড়াল সব সময় ঘোরাঘুরি করে। বিড়ালের জ্বালায় আমরা সবাই অতিষ্ঠ। রাতে বিড়ালগুলো সমস্বরে চিৎকার করে, মারামারি করে। রীতিমতো ওয়ার্ডে তাণ্ডব চালায়! এতে রোগীরা আতকে ওঠে। আর বিড়ালের আছড়-কামড় অহরহ ঘটনা হয়ে উঠেছে।
১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় মমতাজ নামের এক রোগী জানান, বিড়ালগুলো যেখানে সেখানে ও বিছানায় প্রস্রাব-পায়খানা করে। প্রতিদিন টাকা দিয়ে সেগুলো পরিষ্কার করাতে হয়।
হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, পুরাতন, নতুন ও বার্ন ইউনিটের তিনটা ভবনেই শতাধিক বিড়াল আছে।
পুরাতন ভবনের নিচতলায় রোগীদের রান্নার জায়গাটিতে গিয়ে দেখা যায়, একসাথে পাঁচ-ছয়টি বিড়াল ঘোরাঘুরি করছে। সেখানকার এক কর্মচারী জানান, কিছুদিন আগেও বাবুর্চি দুলালকে একটি বিড়াল আচড় দিয়েছিল। তিনি সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল থেকে অনেকগুলো ইনজেকশন নিয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, হাসপাতালের চারদিকে বেওয়ারিশ কুকুর ও হাসপাতালের ভেতরে বিড়ালের উৎপাত বেড়ে যাওয়ার কারণে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমাদের নিজেদের উদ্যোগে কুকুর-বিড়াল সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ২১টি বিড়াল কৌশলে ধরে বাক্সবন্দি করে ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জে উন্মুক্ত স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে ডাক্তার, রোগী ও স্বজনদের যাতায়াত নির্বিঘর্ন করতে কুকুর ও বিড়ালের উৎপাত লাঘব করার অভিযান অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২২
এজেডএস/এমজেএফ