ঢাকা: রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার করা হয় এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, যখন দেশে নির্বাচন আসে তখন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করে থাকে। পুলিশ সব সময় পেশাদারত্বের সঙ্গে সব ধরনের দায়িত্ব পালন করে।
মঙ্গলবার (০৪ অক্টোবর) দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে আয়োজিত নবনিযুক্ত আইজিপি প্রেস কনফারেন্সে এ কথা বলেন আইজিপি।
বাংলাদেশ পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া যায়। আগামী নির্বাচনেও কি এমন হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, পুলিশ সব সময় পেশাদারত্বের সঙ্গে সব ধরনের দায়িত্ব পালন করে। আমরা (পুলিশ) কীভাবে কোনো বিষয় কন্ট্রোল করবো, কোন দায়িত্ব কীভাবে পালন করবো সেটা আইনে (আছে) এবং ট্রেনিং নিয়েছি। পুলিশের প্রতিটি সদস্য পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। এরপরও যদি কারও সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে তবে আমাকে জানাবেন, আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।
বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশ বাড়াবাড়ি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, পুলিশ কর্মসূচিগুলোতে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ট্রেনিং রয়েছে, প্রতি ক্ষেত্রে তা ফলো করা হয়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গিবাদের ট্রেনিং দেওয়া হয়। রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেতে নিরাপদ বোধ করেন না— এ বিষয়ে আইজিপি বলেন, আমরা যখন যেখানে তথ্য পেয়েছি, প্রতিটি তথ্যকে বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই জঙ্গি হামলা হচ্ছে না। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।
তিনি বলেন, কোথায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বা কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে জানান, আমরা ব্যবস্থা নেবো।
পুলিশ বাহিনীতে গোপালগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-বরিশাল-চাঁদপুর গ্রুপিং দেখা যায়। বিভিন্ন সময় এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে হেয় করার জন্য লেগে থাকে, গ্রুপের প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করে— এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আমি পুলিশের গ্রুপিং সম্পর্কে জানি না। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
ডিএমপিতে বছরের পর বছর একই কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের পোস্টিং হলেও ডিএমপির বাইরে পাঠানো হয না। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, বদলির ক্ষেত্রে কিছু কিছু জিনিস ফলো করি। শুধু পুলিশে না বিভিন্ন অরগানাইজেশনে একই লোক অনেক দিন ধরে কাজ করেন। কর্মকর্তার দক্ষতা দেখে যদি মনে করে থাকে রাখা দরকার তাহলে রেখে দেয়। আর যাকে রাখা দরকার না তাকে বদলি করা হয়।
সাংবাদিক ও পুলিশ একে অপরের সঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু মাঠে কাজ করতে গেলে টার্গেট করে সাংবাদিকদের মারধর করা হয়। এ বিষয়ে পুলিশের পদক্ষেপ জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এমন অবস্থায় আপনারা আমাদের বলবেন, আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করবো।
র্যাব সংস্কারের প্রশ্নে সংস্থাটির সাবেক এই ডিজি বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠান সংস্কারের মধ্যে থাকে। অপরাধের ধরন অনুযায়ী সংস্কার হয়ে থাকে। জঙ্গিবাদ ও সাইবার ক্রাইম অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
৯৭ হাজার বিদেশির পাসপোর্ট নেই, অবৈধভাবে বাংলাদেশে রয়েছে। তারা জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তদের ওপর তথ্য নেওয়া হয়। যেই দেশের নাগরিক সেই দেশ থেকে তথ্য নেওয়া হয়। আর ক্রাইমের সঙ্গে যদি তারা জড়িত থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সম্প্রতি নিখোঁজ ৫০ তরুণের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এটি নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পুলিশ-র্যাব জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ চলছে।
পুলিশের দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির রিপোর্ট ও অনেক সময় দুর্নীতির প্রতিবেদন দেখতে পাওয়া যায়। উন্নত পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে আপনি কী ভূমিকা রাখবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন ইতোমধ্যে কমিউনিটি পুলিশের কর্যক্রম শুরু হয়েছে। বিট পুলিশের কার্যকর্ম চলছে। প্রতিটি থানায় জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য ওপেন হাউজ কার্যক্রম চালু রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সকল সদস্যদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গায় ঘাটতি আছে সেগুলো ঠিক করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২২/আপডেট: ১৫০৭
এসজেএ/এমজেএফ