পঞ্চগড় থেকে ফিরে: করতোয়া, মহানন্দা নদীর কোল ঘেষা দেশের সর্ব উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়। নানা কারণে সমৃদ্ধ এই জনপদের জীবনাচারে রয়েছে ঐতিহ্য।
জেলা সদরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীণ হাট-বাজারে দেখা মিলেছে দারুণ স্বাদের এই গুড়ের জিলাপির।
জেলা সদর, বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের গড়ের ডাঙ্গা বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামীণ হাটে বিক্রি হয় এই জিলাপি। একদম গ্রামীণ পরিবেশে মাটির চুলায় তৈরি করা এই জিলাপি একবার খেলে স্বাদ অনেকদিন জিহ্বায় লেগে থাকার মতো। বাজারে প্রচলিত চিনির জিলাপি থেকে এর স্বাদ একদমই আলাদা।
গড়ের ডাঙ্গা বাজারের দোকানি দিলদার হোসেন বলেন, স্বাদ ও গুণে ভালো হওয়ায় অনেক দূর থেকেও মানুষ এখানে জিলাপির স্বাদ নিতে আসেন। ঐতিহ্যবাহী এই গুড়ের জিলাপির সুনাম এখন দেশজুড়ে।
পঞ্চগড় জেলা শহরের বাজারেও বিক্রি হয় এই জিলাপি। খাজা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার নামের একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায় প্রতি কেজি গুড়ের জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা।
আবদুল লতিফ নামের দোকানি জানান, অন্য জেলা থেকে যারাই আসেন গুড়ের জিলাপি নিয়ে যান। স্থানীয়রাও খুব পছন্দ করেন।
এছাড়াও ময়দান দিঘী, কলীগঞ্জ টুনির হাট, মিলগেট, ও তেপুকুরিয়া বাজারেও এ গুড়ের জিলাপি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
কালীগঞ্জ টুনির হাটে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি দোকানে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি খাবার গুড়ের জিলাপি তৈরি করে বিক্রি করছেন। ক্রেতারা দোকানের বেঞ্চে আবার কেউ দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন। আবার অনেকেই বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন কিনে।
আবদুল লতিফ বলেন, ২৫ বছর ধরে মিষ্টির ব্যবসা করছি। প্রতিকেজি জিলাপি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করি। প্রতিদিন ২০থেকে ২৫ কেজি বিক্রি হয়।
আরেক বিক্রতা ওমর ফারুক বলেন, পঞ্চগড়ের গুড়ের জিলাপির ঐতিহ্য আছে। দীর্ঘ ২০ বছর হলো এই জিলাপি বিক্রি করছি।
এ বিক্রেতা জানান, পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও আশপাশের অনেক জেলা থেকে লোকজন এই জিলাপি কিনতে আসেন।
পঞ্চগড় জেলা সদরের খাজা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের জিলাপি কারিগর আবদুল লতিফ বলেন, জিলাপি তৈরি করতে তেল, ময়দা, গুড় প্রয়োজন হয়। ময়দা দিয়ে জিলাপি বানিয়ে এরপর তেলে ভেজে গুড়ের সিরায় ভিজিয়ে তুলে নিতে হয়। চিনির জিলাপির চাইতে এটি মচমচে এবং সুস্বাদু হয়।
ফেনী থেকে পঞ্চগড় ঘুরতে আসা জাহিদুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা জানান, আগে কখনো গুড়ের জিলাপি খাওয়ার সুযোগ হয়নি,আমাদের অঞ্চলে চিনিতেই জিলাপি হয়। গুড় দিয়ে কেউ তৈরি করে না। এই জিলাপি খেতে খুব স্বাদ।
পঞ্চগড় শহরের স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন নামের একজন বলেন, উত্তরের এই জনপদের মানুষ খুবই সহজ জীবন যাপন করে। এখানে খাবারে ভেজাল নেই বললেই চলে। বাজারগুলোতে গুড়ের যে জিলাপি পাওয়া যায় সেগুলো ভালোমানের গুড় দিয়েই তৈরি করা হয়। যার ফলে এগুলো খেতেও দারুণ স্বাদের হয়।
আফসার উদ্দিন নামের স্থানীয় আরেকজন বলেন, গুড়ের জিলাপি এ অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এটি খেতে পছন্দ করেন না এমন লোক খুব কম আছে। যদি তা গরম হয় তা হলেতো কথাই নেই। অনেকেই আত্মীয়ের বাড়িতে নেওয়াসহ নববর্ষ, মিলাদ মাহফিল ও পূজাতে জিলাপি মিষ্টি খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন। সকাল বিকেলের নাস্তায় অনেকে জিলাপি খান।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২২
এসএইচডি/এসআইএস