নড়াইল: স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পর আগামী ১০ অক্টোবর চালু হচ্ছে কালনার মধুমতি সেতু। এতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সংকীর্ণ সড়ক।
মধুমতি সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে দক্ষিণ-পশ্চিমের দূরত্ব কমলেও দুর্ঘটনার মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকবে নড়াইলের কালনা থেকে যশোরের মনিহার পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক।
সেতুর সুফলের চেয়ে যানজট আর ভোগান্তি নিয়ে যানবাহন চলাচল করবে ১৮ ফুট প্রশস্ত এক লেনের সড়কে। এখনই সংকীর্ণ আর আঁকাবাঁকা বাইপাস দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে শত শত পরিবহন। মধুমতি সেতু চালু হলে বহুগুণে বাড়বে গাড়ির চাপ। এতে আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি গাড়ির চালক-শ্রমিকরা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল ১৩০ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নতি করার জন্য ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন সড়কটি ছয় লেনে উন্নতিকরণ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দরসহ ভারতের কোলকাতার যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যাবে। এতে রাজধানীর সঙ্গে বেনাপোল স্থল বন্দরের দূরত্ব কমবে ৮৬ কিলোমিটার।
এছাড়া নোয়াপাড়া-বেনাপোল-ভোমরা বন্দরসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার যানবাহন ও পণ্য পরিবহন হবে নড়াইলের ওপর দিয়ে। সাশ্রয় হবে সময় ও অর্থ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত এক লেন সড়কের প্রশস্ত ১৮-২৪ ফুট। সড়কে নড়াইল-যশোর অংশে ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি সংকীর্ণ সেতু/কালভার্ট রয়েছে। সড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় একশ কিলোমিটার বেশি ঘুরে রাজধানী থেকে বেনাপোলবন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে মানুষ। এতে সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে।
নড়াইল শহরের ভেতর দিয়ে ৫ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা আর সরু বাইপাস সড়কে রয়েছে প্রায় ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে সড়কের এই অংশেই যানজট আর দুর্ঘটনার আশঙ্কা সর্বাধিক।
ঈগল পরিবহনের নড়াইল ম্যানেজার বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কোম্পানির যশোর-বেনাপোলের সব গাড়ি নড়াইলের ওপর দিয়ে ঢাকা যাবে। অন্যান্য পরিবহনসহ পণ্য পরিবহনের সব গাড়ি নড়াইলে ঢুকলে সমস্যার সৃষ্টি হবে। যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকবে।
নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী জহিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর নড়াইলের সড়ক দিয়ে যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। মধুমতি সেতু চালু হলে তা আরও বহুগুণে বাড়বে। সড়ক সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় যানজট ও দুর্ঘটনার মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকবে এ অঞ্চল।
সড়ক বিভাগ জানায়, ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণে ১১ হাজার কোটি টাকার ডিপিপি তৈরি হয়েছে। রোডের নকশার কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এর মধ্যে ৫টি ফ্লাইওভার রয়েছে এবং নড়াইল ও যশোর অংশে পৃথক ২ টি বাইপাস হবে। প্রকল্পের মধ্যে নড়াইল শহরে বাইপাস সড়ক রয়েছে। আপাতত, কালনা থেকে যশোর পর্যন্ত দুই পাশে ৩ ফুট চওড়া করার কাজ চলছে। শহর বাইপাস এলাকায় মাত্র ৩ ফুট রাস্তা বেড়ে হবে ১৮ ফুট।
নড়াইল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ককে ৬-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ অফিসিয়ালি চলমান রয়েছে। আপাতত চাপ সামলাতে কালনা থেকে যশোর পর্যন্ত বর্তমান সড়কটি আরও ছয় ফুট পিচঢালাই করে চওড়া করা হবে। দেড় বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে। তবে ৬-লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হলে ৫ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ৬ লেন প্রকল্পের নড়াইল অংশে ২৭৪ একর জমির অধিগ্রহণের হিসাব ২০২০ সালে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের অর্থায়ন জিটুজি পর্যায়ে রয়েছে। অর্থায়ন নিশ্চিত হলেই কাজ শুরু হবে। আশাকরি দ্রুতই কাজ শুরু করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২২
এমএমজেড