ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জন্ম থেকে কষ্ট করছি, মরার আগে একটু শান্তি দেন

মো. জহিরুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২২
জন্ম থেকে কষ্ট করছি, মরার আগে একটু শান্তি দেন

পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ভয়াল তেতুলিয়ার কড়াল গ্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত শতবছর বয়সী নারী রোকেয়া বেগম। সব হারিয়ে তেতুলিয়ার পাড়ে ঝুপড়িতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার।

নেই স্বামী, ছেলে মেয়ে ও আত্মীয় স্বজন।

শনিবার (৮ অক্টোবর) সকালে হাতে লেখা একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসনের দাবীতে প্রায় এক কিলোমিটার প্রতীকী মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। বিভিন্ন কথার মধ্যে একটি বাক্য বেশ জোর দিয়ে বলেন শতবর্ষী রোকেয়া। জন্মের পর থেকে বহু কষ্ট করেছেন তিনি। মরার আগে তাই একটু শান্তি পেতে চান।

রোকেয়া বলেন, আমরা কেউ নাই। একটা নাতী নিয়ে নদীর পাড়ে ঝুপড়িতে থাকি। ভিক্ষা করে খাই। দুইবার ঘরবাড়ি নদীতে নিয়ে গেছে। আমারে একটা ঘর দেন, মরার আগে একটু শান্তি দেন। আমি জন্ম থেকে কষ্ট করছি।

সকালে নদী ভাঙ্গনের শিকার নাজিরপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের ভিটাবাড়ি হারানো সাধারণ মানুষ তেতুলিয়া নদীর পাড়ে প্রতীকী মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন। এতে যোগ দেন নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মহসিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সেলিম মাতুব্বর, আবুল হোসেন মীর ও বিএনপি নেতা প্রফেসর জসীম উদ্দিনসহ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা। জানা যায়, রোকেয়া বেগমই শুধু নন, নাজিরপুর ইউনিয়নের ওই ৫টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ আজ উদ্বাস্তু। স্থানীয়দের প্রশ্ন, আজও তারা কেন অবহেলিত? তাদের নিয়ে কি কেউ কখনও ভেবেছে?

নাজিরপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত নারী রুপা (৬৩)। বাংলানিউজ তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, প্রতিবছরই তারা নদী ভাঙনের শিকার হন। আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় তারা নদীর আশপাশেই ছাপড়া ঘর তৈরি করে থাকেন। তারা কি এদেশের মানুষ নন? তাদের কি শান্তিতে বসবাসের অধিকার নেই, প্রশ্ন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আপনি আমাদের অভিভাবক, আমাদের দিকে তাকান।

মো. সাকিব হোসেন নামে এক তরুণ জানান, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও তার এলাকার বহু তরুণ-যুবক শতভাগ শিক্ষিত। কিন্তু এর কোনো সুফল তারা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, আমাদের পরিবার নিয়ে থাকার মতো ঘর নেই। কয়েক বছর পর পরই ঘর ভাঙে আমাদের। এখন আমরা টেকসই বেরি বাঁধ ও পুনর্বাসন চাই।

মানবন্ধনে নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মহসিন বলেন, তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনের শিকার ৫ গ্রামের মানুষ আজ নিঃস্ব। তারা বসতভিটা হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অঃদাঃ) রেজা আহমেদ বলেন, নাজিরপুর ইউনিয়নের ভাঙন এলাকার জন্য স্থায়ী বাঁধ তৈরিতে এখনও কোনো প্রস্তাবনা পাঠানো হয়নি। তবে জরুরি জিও ব্যাগের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন হলে, আমরা ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।