ঢাকা: সাভারের একটি গামা বিকিরণ কেন্দ্র প্রতিস্থাপন করবে রাশিয়া। এ কাজের জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের অধীনস্থ রুসাটম হেলথ কেয়ার ডিভিশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাইন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড অটোমেশন (এনআইআইটিএফএ) চুক্তি হয়েছে।
শনিবার (৮ অক্টোবর) রোসাটম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশে রোসাটমের এটিই প্রথম নন-এনার্জি প্রকল্প।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাভারের এই কেন্দ্রটিতে খাদ্যদ্রব্য (মশলা, প্রাণি খাদ্য) ও মেডিকেল সামগ্রীর ট্রিটমেন্ট করা হয়ে থাকে। প্রতিস্থাপনের পর ন্যুনতম ৪০০ (কেসিআই) ক্ষমতাসম্পন্ন একটি উন্নত গামা রেডিয়েশন স্থাপনা পাওয়া যাবে। কেন্দ্রটি প্রতিস্থাপনের জন্য রোসাটম প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির নকশা প্রণয়ন, তৈরি, সরবরাহ, স্থাপন, স্থাপনকালীন তত্ত্বাবধান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং কমিশনিংয়ের কাজ সম্পাদন করবে। এনআইআইটিএফএ ছাড়াও রুসাটম হেলথকেয়ার ডিভিশনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এই কাজে যুক্ত হবে। যেমন আইসোটপ জেএসসি কেন্দ্রটির জন্য সিও-৬০ (কোবাল্ট ৬০) আইসোটপ সরবরাহ করবে।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব রেডিয়েশন অ্যান্ড পলিমার টেকনোলজি (আইআরপিটি) এর আহ্বান করা আন্তর্জাতিক দরপত্রে বিজয়ী হবার পর রোসাটমকে এ কার্যাদেশ দেয়। রোসাটম ছাড়াও এই দরপত্রে জার্মানি ও চীনা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তুলনামূলক মূল্যায়ন বিবেচনায় রোসাটমকে টেন্ডারে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। রোসাটমের আঞ্চলিক কেন্দ্র রোসাটম সাউথ এশিয়া দরপত্রে রুসাটম হেলথকেয়ার ডিভিশনকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়।
রুসাটম হেলথকেয়ার ডিভিশনের প্রধান নির্বাহী ইগোর অব্রুবভ বলেন, বাংলাদেশে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গামা বিকিরণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরিতে আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়বে বলে মনে করি। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, দক্ষতার সঙ্গে অর্পিত কাজটি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে বিকিরণ প্রযুক্তি সরবরাহের ক্ষেত্রে রুসাটম হেলথকেয়ার এবং রোসাটমের আন্তর্জাতিক সুনাম আরও বাড়বে।
রোসাটম সাউথ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী আন্দ্রেই শেভলিয়াকভ বলেন, এতদিন পর্যন্ত রোসাটম বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে নিয়োজিত ছিল। বিভিন্ন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রেও আমাদের সক্ষমতা ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। গামা বিকিরণ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের সরবরাহ শুধুমাত্র বাংলাদেশ রোসাটমের প্রথম নন-এনার্জি প্রকল্পই নয় বরং একই সঙ্গে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে।
গামা রেডিয়েশন ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্যের সেলফ-লাইফ কয়েকগুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। এটিই একমাত্র প্রযুক্তি, যা খাদ্যদ্রব্যের বিশুদ্ধতা ১০-৬ পর্যন্ত অর্জন করা সম্ভব। ক্ষতিকারক মাইক্রো অর্গানিজমের রাসায়নিক বন্ড ভেঙে দেয় গামা বিকিরণ এবং কোনো রেসিডিও থাকে না। এ স্টেরিলাইজেশন প্রক্রিয়ায় স্পোর আকারে উপস্থিত রোগ সৃষ্টিকারী মাইক্রো অর্গানিজমসহ অন্যান্য নন-প্যাথোজেনিকের মৃত্যু ঘটে। গামা রশ্মির ভেদন ক্ষমতার জন্য প্যাকেজজাত অবস্থায় খাদ্যদ্রব্যের ট্রিটমেন্ট করা সম্ভব। এর অন্য একটি সুবিধা হলো ট্রিটমেন্টের পরপরই খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার করা যেতে পারে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সি (আইএইএ) এ পদ্ধতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এসব কারণে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী কোল্ড স্টেরিলাইজেশন এর ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২২
এসকে/আরআইএস