ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী আর নেই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২২
চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী আর নেই

ঢাকা: সত্তর দশকের পরবর্তী সময়ে চিত্রকলায় নিরীক্ষাধর্মী কাজে যার নামটি উচ্চারিত হয়েছে বারবার, সেই প্রথিতযশা শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী মারা গেছেন।  

গ্যালারি চিত্রকের কর্ণধার ও দেশের অগ্রগণ্য শিল্পী মো. মনিরুজ্জামান জানান, সমরজিৎ রায় রোববার (৯ অক্টোবর) দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

তার মরদেহ এখন হাসপাতালেই রয়েছে। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন।  

সমরজিৎ রায়ের জন্ম ১৯৩৭ সালে। তিনি গ্রাফিক ডিজাইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলেও প্রথম থেকেই সৃজনশীল সুকুমার শিল্পচর্চায় করেছেন এবং নিরীক্ষাধর্মী শিল্পচর্চার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। চিত্রকলায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, সমরজিৎ রায় চৌধুরী দীর্ঘদিন হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। গত তিন-চার দিন আগে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। তখন তাকে দ্রুত ল্যাবএইড হাসপাতালে আনা হয়। দুপুরে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।

চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী ছিলেন মূলত রোমান্টিক ধারার এক শিল্পী। তিনি ঢাকার তৎকালীন চারু ও কারুকলা কলেজ থেকে স্নাতক লাভ করেন ১৯৬০ সালে। সমরজিৎ রায় ১৯৬০ সালে তৎকালীন সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৬০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে যোগ দেন এবং সেখানে ৪৩ বছর চাকরিজীবন শেষে অধ্যাপক হিসেবে ২০০৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। পরে তিনি শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির চারুকলা এবং প্রদর্শন কলা বিভাগের ডিন হিসেবে ২০১০ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপারনিউমারেরি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।

কমার্শিয়াল আর্ট বা গ্রাফিক ডিজাইনে স্নাতক অর্জন করলেও দ্রুত তিনি সৃজনশীল চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ১৯৮৩ সালে অনুষ্ঠিত তার প্রথম একক চিত্র-প্রদর্শনী হয়। প্রথম দিকে তিনি প্রাকৃতিক নিসর্গ, গ্রামীণ জীবন ও নাগরিক বিষয়নির্ভর তেলরং ছবি আঁকতে উদ্যোগী ছিলেন। তখন তার ক্যানভাসে বিন্যাস ছিল খুব জমাট, রং ছিল গাঢ় ও মিশ্র, আঙ্গিক কিউবিস্ট ধারার। পরবর্তী তিন দশকে তিনি নিজেকে ক্রমাগত বিবর্তিত করেছেন, বিষয় নির্বাচনে, রং ব্যবহারে এবং উপস্থাপনার আঙ্গিকে।

সাদৃশ্যমূলক দৃশ্য-বর্ণনার চাইতে সাংকেতিক আকার বা প্রতীকের দিকে ঝুঁকেছেন বেশি, নানা রকম জ্যামিতিক আকার, ছোট ছোট ত্রিভুজই ছিল তার বেশি পছন্দের, বা চতুষ্কোণ আকারও ব্যবহার করেছেন। তার রং নির্বাচন ছিল হালকা ও মিশ্র। তার আরেক ধরনের ছবিতে বিন্যস্ত হয়েছে কৃষিজমির ব্যবহার, নানা রঙের আয়তাকার বা বর্গাকার ছোট-বড় ক্ষেত্র, ওপর থেকে দেখা দৃশ্য।

বর্তমান শতাব্দীর শুরু থেকেই সমরজিৎ অধিকতর মানব-মানবী ও পাখিনির্ভর ছবি এঁকেছেন। এক্ষেত্রে উপস্থাপনায় ভারী কালো রেখা ও উজ্জ্বল রং ব্যবহার করেন।

চারুকলায় অবদানের জন্য তিনি শিল্পকলা পদকেও ভূষিত হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২২
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।