চাঁদপুর: চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় মা ইলিশের প্রজনন রক্ষা অভিযানের শুরুতেই মারমুখী হয়ে উঠেছেন জেলেরা। বিশেষ করে নৌ-পুলিশের ওপর চড়াও হচ্ছে তারা।
গত ২৪ ঘণ্টায় চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় দুটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন এবং একটি শর্টগান নদীতে হারিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে চাঁদপুরের নৌ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা এসব ঘটনা বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউকে বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের সফরমালি এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেসময় নৌ পুলিশের নিয়মিত টহল সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। নৌ পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জেলেরা তাদের সঙ্গে থাকা জালের ইটার তৈরি চাক্কি ছুড়তে শুরু করে। এ সময় নায়েক হাসান মিয়া (৩৫) নৌ পুলিশের সদস্য গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে।
তিনি আরো বলেন, হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
এদিকে চাঁদপুর সদরের আলু বাজার পুলিশ ফাঁড়ির একটি টহল দল হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর নীলকমল এলাকায় সোমবার বিকেলে স্পিডবোট নিয়ে অভিযান চালায়। এ সময় তারা জেলেদের তিনটি নৌকা জব্দ করে। পরে মাছ ধরা অবস্থায় জেলেদের আটক করতে গেলে পিছন থেকে মাছ ধরার ট্রলার স্পিডবোটের ওপরে উঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে স্পিডবোটে থাকা ৪ পুলিশ সদস্য এবং চালক পানিতে নিমোজ্জিত হয়। পরে তারা সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও কনস্টেবল বাশারের সঙ্গে থাকা শর্টগান নদীতে হারিয়ে যায়।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে আলু বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পুলিশ সদস্যরা কেউ গুরুতর আহত হয়নি। তবে শর্টগানটি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সোমবার রাতে এবং আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল শর্টগান উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
আলু বাজার পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মনসুর খান বাংলানিউজকে বলেন, ফাঁড়ি পুলিশের অভিযানে ভাড়া করা যে স্পিডবোট ব্যবহার করা হচ্ছে, তার চালক ফজল হক পাটওয়ারী দক্ষ না। এ কারণে স্পিডবোট উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
হাইমচর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, আলু বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা সদরের হলেও তারা অভিযান করেছেন হাইমচর এলাকায়। আমরা জেনেছে তাদের ৪জন পুলিশ সদস্য স্পিডবোট উল্টে আহত হয়েছেন। তবে গুরুতর আহত না হলেও তাদের একটি অস্ত্র হারিয়ে গেছে।
নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে নৌ-পুলিশ খুবই তৎপর। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। হামলার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ইলিশের প্রজনন রক্ষায় ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময় পদ্মা-মেঘনায় ইলিশসহ যেকোন মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও পরিহন নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড এবং উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২২
আরএ