ঢাকা: সম্প্রতি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) গেজেটভুক্ত হওয়ায় নকশা অনুমোদন, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও ভূমি একত্রীকরণের জন্য আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে।
গত এক মাসে রাজউকে এই তিনটি বিষয়ে ৩ হাজার ২০১টি আবেদন জমা পড়ে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে রাজউকের আটটি অঞ্চলে নকশা অনুমোদন, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও ভূমি একত্রীকরণের আবেদন জমা পড়েছে ৩ হাজার ২০১টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৯০টি। ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আবেদন পড়েছে ১ হাজার ৮২১টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৯৭টি। সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে অঞ্চল-৪ (গুলশান, মহাখালী ও পূর্বাচল), যার সংখ্যা ৫৯৪টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৮৪টি। আর সাভার ও মিরপুর এলাকায় (অঞ্চল-৩) ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের জন্য আবেদন পড়েছে ৪৭৭টি। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৮৮টি। অঞ্চল-৬ অর্থাৎ মতিঝিল ও ভুলতা এলাকায় আবেদন জমা পড়েছে ২৮৬টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ১১৩টি।
উত্তরা, গাজীপুর, টঙ্গী এলাকায় (অঞ্চল-২) আবেদন জমা পড়েছে ২১২টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯৪টি। ১৫৩টি আবেদন পড়েছে নারায়ণগঞ্জ, ডেমরা ও সোনারগাঁও এলাকায়। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৭টি। আশুলিয়া ও ধামসোনা ইউনিয়ন এলাকায় (অঞ্চল-১) আবেদন পড়েছে ২৫টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ২৩টি। এ ছাড়া নকশা অনুমোদনের জন্য রাজউকে গত এক মাসে আবেদন জমা পড়েছে ১ হাজার ১৬৯টি, যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৫৬টি। এর মধ্যে গাজীপুর, উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় ১৬৯টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ৬১।
মতিঝিল ও ভুলতা এলাকায় সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে। ২৫৯টি আবেদনের মধ্যে ১২৬টি নিষ্পত্তি হয়েছে। ২২৪টি আবেদন জমা পড়েছে সাভার ও মিরপুর এলাকায়। গুলশান, মহাখালী ও পূর্বাচল এলাকায় ২০৫টি আবেদন জমা পড়েছে। এ ছাড়া অনুমোদিত বেসরকারি হাউজিংয়ের ছাড়পত্র বা একত্রীকরণের নথি জমা পড়েছে ২১১টি। যার মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১৩৭টি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ কিছু এলাকা ২০১০ সালের ড্যাপে দেখানো হয়েছিল গ্রামীণ জনপদ। ওই সব এলাকা থেকে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদনের জন্য কেউ আসতো না। নতুন ড্যাপে ওই সব এলাকায় ৪ থেকে ২০তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের সুযোগ রয়েছে।
জানা যায়, আগে রাজউক এলাকায় প্রতি বছর গড়ে ৪ হাজার ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হতো। ২০২০ সালের অক্টোবরে নতুন ড্যাপের খসড়া প্রকাশ পায়। ওই বছর ৫ হাজার ৬১২টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যদিও ওই সময় করোনার কারণে সারা দেশে লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ ছিল। তা সত্ত্বেও রাজউকে ভবন নির্মাণ অনুমোদনের আবেদন ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। এ ছাড়া ২০২১ সালে ১০ হাজার ৩২টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়, যার বেশির ভাগই ছিল আবাসিক ভবন। চলতি বছর ২৩ আগস্ট নতুন ড্যাপ গেজেট হওয়ার আগে ১ জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৫৬টি ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন দিয়েছে রাজউক।
বিগত বছরগুলোর আবেদনের গড় অনুযায়ী নতুন ড্যাপ গেজেট হওয়ার পর ভবন নির্মাণে অনুমোদনের আবেদন বেশি সাড়া ফেলছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলেন, ২০২০ সালের ৫ হাজার ৬১২টি, ২০২১ সালে ১০ হাজার ৩২টি ও চলতি বছরের ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৫৬টি, যা গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৮০০ ভবন অনুমোদন হয়েছে। সে হিসেবে ড্যাপ গেজেট হওয়ার পর গত এক মাসে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা পড়েছে ২ হাজার ৯৯০টি। অর্থাৎ আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নকশা আবেদনকারী বলেন, আমরা নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করলে রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এখন আবেদন কেন করেন! আরও ৬ মাস পর আবেদন করেন। ড্যাপ সংশোধন হবে। এই বলে চলে যেতে বলেন।
সার্বিক বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ড্যাপ গেজেট হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড্যাপ অনুমোদন দিয়েছেন। এখন আমরা এটা বাস্তবায়ন করছি। কেউ যদি ব্যত্যয় ঘটায় এবং রাজউকের কোনো কর্মকর্তা যদি আবেদনকারীকে উল্টা-পাল্টা বোঝায়, এ রকম কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, নতুন ড্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশের পরিকল্পনাগুলো যাচাই করেছি এবং বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি। তাদের পরামর্শ নিয়েছি, যাতে দীর্ঘ মেয়াদে এই শহরের মান বাড়ে। উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর জন্য মাঠ, পার্ক, রাস্তাঘাট, ভবনের আয়তনসহ সার্বিক মান উন্নয়ন আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমরা জনঘনত্ব নির্ধারণ করেছি। এখন ব্যক্তি চিন্তা করলে কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। যেসব এলাকায় জনঘনত্ব বেশি, সেখানে আমরা যদি জনঘনত্ব বাড়িয়ে দিই এটার প্রভাব পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটসহ সব কিছুর ওপরেই পড়বে। সেটা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সরকারের। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে ড্যাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছি। তবে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদনের হার গত বছরের চেয়ে ভালো এবং আগামীতে তা কয়েক গুণ বাড়বে বলে আশা করি।