ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মাদকদ্রব্য আনতে লাগবে অধিদপ্তরের অনুমোদন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
মাদকদ্রব্য আনতে লাগবে অধিদপ্তরের অনুমোদন

ঢাকা: পাড়া-মহল্লা অলিগলি থেকে শুরু করে সব জায়গাতে মাদক এখন সহজলভ্য। অবৈধ এই কারবারে অতিরিক্ত লাভের আশায় বিভিন্ন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা জড়িয়ে পড়ছেন।

একদিকে তারা রাতারাতি টাকার কুমির হচ্ছেন, অন্যদিকে দেশের যুব সমাজের বড় অংশ মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে। অসাধু এসব মাদক কারবারিদের অপতৎপরতায় দেশের সবখানে এখন মিলছে মাদক।

ভোগ্য পণ্য ও কাঁচামাল বহনকারী পরিবহন, যাত্রীবাহী বাসসহ নানা কৌশলে কারবারিরা সীমান্ত এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ ও পাচার করেছে।  পাশাপাশি নৌপথ- স্থলপথ ও আকাশ পথেও পণ্যের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আনা হচ্ছে ভয়ানক সব মাদক।  

এদিকে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলেও বিদেশ থেকে মাদকদ্রব্য আমদানি করছে। যদিও ওইসব প্রতিষ্ঠানের কোনো লাইসেন্স বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমতি নেই। তবুও অসাধু কারবারিরা বাংলাদেশে মাদকের বড় বাজার তৈরির চেষ্টা করে চলেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, কিছু অসাধু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এলসির মাধ্যমে আইনের তফসিলভুক্ত মাদকদ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করে বাজারজাত করছেন। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপর দিকে আমদানিকৃত মাদকদ্রব্যসমূহের বিভিন্নভাবে অপব্যবহার হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক-১ শাখার মাধ্যেমে বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানায়।  

অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত-২০২০)-এর ১ম তফশিলে ‘ক’ ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আইনের ৯, ১০ ও ১১ ধারা অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া মাদকদ্রব্যসমূহ আমদানি, সংরক্ষণ, ব্যবহার, গুদামজাতকরণ, সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়, বিক্রয়, উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন ও স্থানান্তরের কোনো সুযোগ নেই।

এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ, মাদক-১ শাখা থেকে ইস্যু করা নির্দেশনা অনুযায়ী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে। এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ একটি নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পারমিট, অনাপত্তি বা পূর্বানুমতি ছাড়া মাদকদ্রব্য আমদানির জন্য এলসি ইস্যু না করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তর উপ অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, দেশে মাদকের অপব্যবহার বাড়ছে। সেই সঙ্গে যুব সমাজের বড় একটা অংশ মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে।  

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো হয়।

শুধু তাই নয়, বিদেশ ফেরত কর্মী, সিএনজি অটোরিকশা চালক, সিকিউরিটি গার্ড, কাপড় ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার আড়ালে সিন্ডিকেটের সদস্যরা মাদক পাচার করছেন।  

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, কক্সবাজারের মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকায় মাদকের বড় বাজার তৈরির চেষ্টা করছেন কারবারিরা। কেউ কেউ অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করেও মাদকের চালান সরবরাহ করছেন৷ সম্প্রতি বিদেশ ফেরত কর্মী, সিএনজি চালক এবং কক্সবাজারের মাদক কারবারিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মাদক সিন্ডিকেটের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।  

এই চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকদ্রব্য সরবরাহ করতেন। তদের সিন্ডিকেটের অনেকেই নিজের পেশার আড়ালে মাদকের কারবার পরিচালনা করছেন বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে মাদক
মিয়ানমার থেকে নাফ নদী হয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ও আইস মাদক ঢুকছে। এবিষয়ে মিয়ানমারের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক বার আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব মাদক চোরাচালানের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তারা মাদক চোরাচালানের বিষয়ে একেবারেই উদাসীন। তাদের সীমান্তে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) একাধিকবার বৈঠক করেও মাদক চোরাচালান বন্ধে কোনো সুফল পায়নি।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দসহ চোরাচালানকারীদের আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।  

বিজিবি'র জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) মো. শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জব্দ মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে-  ৮ লাখ ৩১ হাজার ৫৯৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩ কেজি ১৪১ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১৯ হাজার ৭৯৭ বোতল ফেনসিডিল, ১৫ হাজার ২০২ বোতল বিদেশি মদ, ৭৯৫ লিটার বাংলা মদ, ২ হাজার ৬৮০ ক্যান বিয়ার, ২ হাজার ২০৬ কেজি গাঁজা, ২ কেজি ১৬ গ্রাম হেরোইন, ২১ হাজার ৯৮টি ইনজেকশন, ৬ হাজার ৬২০টি ইস্কাফ সিরাপ, ৭৫৫ বোতল অ্যামকেডিলকফিডিল, ২ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৭টি অ্যানেগ্রাসেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৯ লাখ ৬১ হাজার ৫২৪টি বিভিন্ন প্রকার ওষুধ এবং ৯৭ হাজার ৩৫০টি অন্যান্য ট্যাবলেট। এসব মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে সীমান্ত রক্ষীরা।

দেশে প্রতিনিয়ত মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের অধিকাংশ মানুষ মাদকের শিকার হচ্ছেন। একদিকে দেশে মাদকের চাহিদা বাড়ছে সেই সঙ্গে মাদকের সরবরাহও বাড়ছে। এমনটাই মত প্রকাশ করেছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

বেসরকারি একটি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মাদকাসক্ত রযেছে ৭৫ লাখেরও বেশি। এসব মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশ তরুণ-তরুণী। বেকার রয়েছে ৪৩ শতাংশ, বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৬০ শতাংশ। ৪০ শতাংশ অশিক্ষিত, ৪৮ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং ৫৭ শতাংশ যৌন অপরাধী। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ধূমপায়ী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
এসজেএ/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।