ঢাকা: ফেনীর সোনাগাজীতে মাকে বেঁধে রেখে তার সামনে মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লাতু মিয়াকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
ঘটনার পর থেকে লাতু মিয়া দীর্ঘ ১৮ বছর আত্মগোপনে ছিলেন।
র্যাব জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য নানা অপকর্ম করতেন লাতু। ভুক্তভোগীর বাবা মারা যাওয়ায় তার মাকে এবং তাকে বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন লাতু মিয়া। ভুক্তভোগীরা এই কু-প্রস্তাব রাজি না হওয়ায় লাতু তার দলবল নিয়ে ২০০৩ সালের ১৩ মে ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে হামলা করে। ঘরের দরজা ভেঙে বিধবা মাকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফট্যানেন্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ২০০৩ সালে মাকে বেঁধে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৩ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ১৮ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লাতু মিয়াকে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিগত ২০০৩ সালে ১৩ মে গভীর রাতে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের একটি বাড়িতে ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে লাতু মিয়া, ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম ও কাশেম। পরে তারা বিধবা মাকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে তার সামনে ১৩ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা ১৩ মে সোনাগাজী থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে বিগত ২০০৩ সালের ১৩ আগস্ট আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। পরে মামলার বিচার কাজ শেষে ২০২২ সালের ১৪ জুলাই জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাশেম ও মো. লাতু মিয়াসহ অভিযুক্ত তিন আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করেন এবং মো. ফারুকের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস প্রদান করেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লাতু র্যাবকে জানান, সোনাগাজী এলাকায় মো. ফারুকের নেতৃত্বে তিনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে নানা অপকর্ম করতেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় নারীদের উত্যক্ত করতেন। ভুক্তভোগীর বাবা শিশুকালে মারা যাওয়ার পর তার বিধবা মা খুব কষ্টে দিন যাপন করছিলেন। তারা বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী ও তার মাকে কুপ্রস্তাব দিতেন। কিন্তু উক্ত কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০০৩ সালের ১৩ মে গভীর রাতে তারা চারজন মিলে ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করে। পরে ঘটনাটি সারা দেশে আলোচিত হলে লাতু আত্মগোপনে চলে যান।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর পর লাতু ও তার সহযোগীরা একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। জামিনে বের হওয়ার পর মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তারা ভুক্তভোগী ও তার মাকে ভয় ভীতি প্রদর্শন করেন।
লাতুর পলাতক জীবন
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ২০০৩ সালে ধর্ষণের ঘটনার পর তার পলাতক জীবন শুরু হয়। এই ঘটনার পর সে চট্টগ্রামে গিয়ে রিকশাচালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। কিন্তু কোনো কায়িক পরিশ্রম তার ভালো লাগত না। তারপর তিনি চুরি ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েন। একটি ডাকাতির ঘটনায় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন। জামিনে বের হয়ে তিনি গোপনে তার বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাসায় অতিথি হিসেবে জীবন যাপন করতেন।
মাঝে মাঝে নিজ বাড়িতে এসে গোপনে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে দেখা করতেন। মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়ার পর তিনি ঢাকায় একটি মাজারে আত্মগোপন করেন।
চলতি বছরে ২৬৪ জন বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। বর্তমানে তাদের হাতে বেশ পুরনো ২০ থেকে ২৫টি মামলা রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা আসামিদের ধরতে না পারার পেছনে ব্যর্থতার কারণ সম্পর্কে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, পুরনো মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আসামিদের তথ্য পাওয়া কঠিন। আসামিদের সিডিআর অনেক সময় থানা থেকে পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
এসজেএ