ঢাকা: ‘রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তা’ পরিচয়ে পূর্বাচলে প্লট কিনে দেওয়ার নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মজিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। প্লট না পেয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান যখন তার টাকা ফেরত চান, ঠিক তখনই ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা দিয়ে হয়রানিসহ নাজেহাল করে আসছিলেন এই মজিবুর।
আদালতের নির্দেশে ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তে মোস্তাফিজুর রহমান বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা মিথ্যা মামলার প্রমাণও পেয়েছে পিবিআই। এই ঘটনায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার তথ্য-প্রমাণও পেয়েছেন পিবিআইর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মজিবুর রহমান নামের একজন আমাকে পূর্বাচলে একটি প্লট কিনে দিতে চান। এরপর একটি অঙ্গীকারনামায় সই করি আমরা। প্লট কিনতে কয়েকটি কিস্তিতে তিন কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি মজিবুরকে। পরে প্লট কিনে না দিয়ে মজিবুর আমার সঙ্গে নানা টালবাহানা শুরু করেন। আমি আমার টাকা ফেরত চাইতে গেলেই পরিবারসহ আমাকে হত্যার হুমকি দেন মজিবুর রহমান। ’
তিনি বলেন,‘এ নিয়ে মজিবুরের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তখন মামলা নেয়নি। এরপর নিজের ও পরিবারেরর নিরাপত্তার স্বার্থে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। এতে প্রতারক মজিবুর ক্ষিপ্ত হয়ে জিডি তুলে নিতে হুমকি দিতে থাকেন। এরপর মজিবুর আমার বিরুদ্ধে উল্টো ধানমন্ডি থানায় একটি মিথ্যা জিডি করেন। একসময় জানতে পারি, ২২ ফেব্রুয়ারি মজিবুর আমাকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলাও করেছেন। ওই মামলায় তিনি পুলিশ দিয়ে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন। পরে জামিন নিয়ে ৩ মার্চ মজিবুরকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় আমি একটি মামলা করি। মামলা তদন্তে আদালতের মাধ্যমে পিবিআইর সহযোগিতা চাই। ’
মামলা তদন্তে যা পেয়েছে পিবিআই:
মজিবুর রহমানের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআইর কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান জানতে পেরেছেন, ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে মজিবুর রহমান ধানমন্ডি থানায় যে মামলাটি করেছিলেন, তা মিথ্যা ছিল। এরই মধ্যে মামলাটি তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন পুলিশের তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। মামলা তদন্তের একটি প্রতিবেদন বাংলানিউজের হাতে এসেছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাদী ও বিবাদীর অঙ্গীকারনামার স্ট্যাম্প ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিনতাই হয়। অথচ এ নিয়ে ১০ দিন আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি থানায় জিডি করেন মজিবুর। ছিনতাইয়ের দুই দিন আগে ২২ ফেব্রুয়ারি মামলা করেন মজিবুর। তাহলে কিসের ভিত্তিতে বা কোন দলিলের ভিত্তিতে এই মামলা রুজু হলো তা প্রশ্নবিদ্ধ। এ ছাড়া অঙ্গীকারনামা স্ট্যাম্পে উল্লেখ আছে যে ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জমি প্লট রেজিস্ট্রি ও হস্তান্তর করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন মজিবুর রহমান, অন্যথায় তিন মাসের মধ্যে পুরো টাকা এককালীন ফেরত দেবেন। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন মোস্তাফিজুর রহমান। যেখানে তিন মাসের কথা বলা হয়েছে, এর পাঁচ দিন অতিক্রম হওয়ার পরই ধানমন্ডি থানায় মামলা রুজু হয়। এটা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া ১৬ ও ২১ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন সময়ে মোস্তাফিজুরের মারধর ও হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ করেছেন মজিবুর রহমান, তদন্তে এর কোনে সত্যতা পায়নি পিবিআই।
প্রতিবেদনে পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান উল্লেখ করেছেন- ‘মামলায় নানা রকম অসঙ্গিতসহ অঙ্গীকারনামা দলিলে অসম্পূর্ণ বিষয় থাকা সত্ত্বেও ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মামলা গ্রহণ করাটা একেবারেই সমীচীন বলে মনে হয়নি। এ ব্যাপারে ওসিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চিঠির মাধ্যমে আমার কাছে (পিবিআই) হাজির হওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি হাজির হননি’।
মজিবুর রহমান মিথ্যা মামলা করে সরকারি সময় ও অর্থের অপচয় করেছেন। এ অবস্থায় মিথ্যা মামলা দায়েরের অপরাধে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতে সুপারিশ করেছেন পিবিআইর এই তদন্ত কর্মকর্তা।
এবিষয়ে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া বলেন, ‘কেউ মামলা করতে চাইলে আইনগতভাবে পুলিশ নিতে বাধ্য। এ কারণে মামলা নিয়েছি। পরে পিবিআই এর তদন্তে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ’
এদিকে ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের করা মামলায় মজিবুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২২
এসজেএ/ইআর