রূপপুর, (ঈশ্বরদী, পাবনা) থেকে: উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত যে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য রাশিয়া ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটে রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (পারমাণবিক চুল্লিপত্র) স্থাপন উদ্বোধন করে অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে এই রিঅ্যাক্টর ভেসেল স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র না। পরমাণু ব্যবহার করা খুবই কঠিন। পরমাণু মানুষের কল্যাণের জন্য। বাংলাদেশ শান্তির জন্য এটা ব্যবহার করছে। এ প্রকল্প নির্মাণকালে সার্বিক নিরাপত্তার দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যসহ সবকিছু মাথায় রেখেই নির্মাণ কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড পরিস্থিতির সময়ও রাশিয়ার বিশেষজ্ঞরা প্রকল্পের কাজ বন্ধ করেনি। নিরাপত্তাসহ সব বিভাগই কাজ অব্যাহত ছিল। সবার আন্তরিকতার কারণেই অত্যন্ত কঠিন এই কাজ আমরা করতে পেরেছি। এ কারণেই আজকের অগ্রগতি হয়েছে। আজকে সত্যিকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। যদিও ২০২১ সালে ১০ অক্টোবর প্রথম ইউনিটে প্রেসার ভেসেল স্থাপন। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই আজ দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন করা হলো। এজন্য আমি রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশের কর্মকর্তা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ যারা কাজ করছেন সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ আর অন্ধকারে থাকবে না। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। যাতে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটও চালু করার আশা রাখি। এর মাধ্যমে জলবায়ু সম্মেলনের যে সিদ্ধান্তটা ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের যে ঝুঁকিটা এতে পরিবেশের কোনো ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে না। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে মানুষকে দিতে পারব। আমরা এখনো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করে যাচ্ছি। এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তা অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ হবে। এটা আমাদের কোনো ক্ষতিই করবে না বরং মানুষ স্বচ্ছ একটা বিদ্যুৎ পাবে। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি বড় অবদান রেখে যাবে। সে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়ে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের মানুষই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। শিল্প কারখানা এবং সেচ কাজ অথবা নিজের ঘরসহ সব কাজেই প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এই বিদ্যুৎ কাজে লাগাতে পারবে। প্রথম ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট এবং দ্বিতীয় ইউনিটে আরও ১২০০ মেগাওয়াটসহ মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, এটা মোটেই কম কথা নয়। যা আমাদের দারিদ্র্য মুক্তি ও মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিরাট অবদান রাখবে। আমরা ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত যে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছি তা বাস্তবায়নে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এর জন্য আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ রাশিয়াকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ জানাই। রোসাটমকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকে এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরাট অর্জনের দিন হিসেবে শনাক্ত হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২২
এসকে/এএটি