লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে যৌতুকের ২০ হাজার টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে ভারতে পাচারের অভোযোগ উঠেছে স্বামী মো. সোহাগের বিরুদ্ধে। সেখানে তাকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করাতেন তিনি।
এ ঘটনায় কমলনগর থানা পুলিশ সোহাগকে আটক করেছে। পরে তাকে সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। থানায় সোহাগ ও তার বোন সহিদা বেগমকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোসলেহ্ উদ্দিন বাংলানিউজকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতে ভিকটিমের বাবা তাজল ইসমাইল বাদী হয়ে দুইজনের নামে থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় সোহাগকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
ওসি বলেন, সোহাগ তার স্ত্রীকে বেড়ানোর কথা বলে চেরাই পথে ভারতে নিয়ে যান। সেখানে তার বোনের কাছে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করান। তার বোনও ভারতে অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত।
সোহাগ (২২) জেলার সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরউভূতি গ্রামের সফিক উল্যার ছেলে।
ভূক্তভোগীর পরিবার জানায়, প্রায় ৫ মাস আগে সোহাগের সঙ্গে কমলনগরের চরকালকিনি ইউনিয়নের মতিরহাট এলাকার তাজল ইসলামের মেয়ে রিনা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এতে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়ার কথা থাকলেও ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এতে বাকি টাকার জন্য সোহাগ তার স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় চাপ প্রয়োগ করে। এরমধ্যেই বিয়ের দুই মাস অতিবাহিত হয়। পরে বেড়ানোর কথা বলে সোহাগ রিনাকে ঢাকা নিয়ে যায়। সেখানে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ড্রামে করে চোরাই পথে রিনাকে ভারতের কলকাতার কাছাকাছি স্থানে সোহাগ তার বোনের কাছে নিয়ে যায়। পরে সোহাগ দেশে চলে এলেও রিনাকে রেখে আসে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে রিনার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের লোকজন সোহাগকে চাপ প্রয়োগ করে। এতে সোহাগ জানায়, রিনা তার বোনের কাছে ঢাকায় আছে।
কিন্তু যোগাযোগের জন্য ঠিকানা বা মোবাইল নাম্বার চাওয়া হলেও সোহাগ তা দিচ্ছিল না। ঘটনাটি সন্দেহজনক হওয়ায় গত ১০ অক্টোবর রিনার ভাই মো. জাহাঙ্গীর কমলনগরের হাজিরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে সোহাগের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেয়। পরে পুলিশ সোহাগকে চাপ দেয় রিনাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য। নিরুপায় হয়ে এক সপ্তাহ আগে রিনাকে অচেতন করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। স্বাভাবিক হয়ে রিনা বুঝতে পারে তিনি স্বামীর বাড়িতে আছেন। স্বামীর বাড়ি থেকে গোপনে তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন। পরে পরিবারের লোকজনকে রিনা সবকিছু খুলে বলেন।
ভুক্তভোগী রিনা আক্তার জানিয়েছেন, তাকে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ভারতে তার ননদ সহিদার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৩ মাস তাকে অনেক অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের কথা না শুনলেই শারিরীকভাবে নির্যাতন করা হতো।
পুলিশ জানায়, যৌতুকের বাকি টাকা দেবে বললে লোভে পড়ে সোহাগ বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাতে শ্বশুর বাড়িতে আসে। সেখানে তাকে আটকে রেখে শ্বশুর বাড়ির লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পরে কমলনগর থানা পুলিশ তাকে আটক করে।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাস্থল সদর থানার আওতাধীন হওয়ায় সোহাগকে সেখানে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
নিউজ ডেস্ক