ঢাকা: বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারেন। জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ইতোমধ্যে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বিমানের জুনিয়র ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে ডিবির লালবাগ বিভাগ। গ্রেফতাররা হলেন—আওলাদ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), এনামুল হক (২৮), হারুন-অর-রশিদ ও মাহফুজুল আলম (৩১)।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (২২ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, শুক্রবার বিমানের একটি নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন আমরা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে যাই। এরপরই আমরা কাজ শুরু করে দেই। এর ধারাবাহিকতায় প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এবং প্রশ্ন বিতরণের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করি।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবি কর্মকর্তা জানান, তাদের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর থেকে তারা পরিকল্পনা শুরু করে দেন কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস করবেন এবং কীভাবে বিতরণ করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরীক্ষার আগের দিন ৪-৫ জন মিলে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নটি ফাঁস করেন।
পরে গ্রেফতাররা টাকার বিনিময়ে সরাসরি ফাঁস প্রশ্ন এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিতরণ করেন। এই প্রশ্ন তারা সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এছাড়া গরিব পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন দিয়ে তারা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই নিয়েছে যে, তাদের বাড়ি কিংবা জমিজমা লিখে দেবেন।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গ্রেফতার আসামিরা এর আগেও বিভিন্ন প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। এই নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। এই কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, সেই রহস্য উদঘাটন করার জন্য আমরা আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করব।
তিনি বলেন, গ্রেফতারদের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করব। গ্রেফতাররা জানিয়েছেন, এর আগেও কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই টাকার ভাগ তারা আবার ওই সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও দিয়েছেন। এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করব।
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে আমরা আরও জানার চেষ্টা করব, এই প্রশ্ন ফাঁস চক্রটির সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত রয়েছে। এছাড়া বিমানের ডিজিএম ও জিএমের সমন্বয়ে যে কমিটিটা গঠিত হয়েছিল তাদের কাজ ছিল প্রশ্ন ফাঁসের মতো বিষয় রোধ করা। কিন্তু তাদের চোখের আড়ালে কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস করা হলো, তা আমরা জানতে চাইব। এ বিষয়ে তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব।
চক্রটি ফাঁস করা এই প্রশ্ন কতজন পরীক্ষার্থীদের কাছে বিলি করেছিল, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আমরা সঠিক সংখ্যাটি জানাতে পারব।
অপর আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা অভিভাবকদেরও বলেছিলাম প্রশ্ন ফাঁসের এই ধরনের ঘটনা তাদের চোখের সামনে এলে যেন আমাদের জানান। কিন্তু কিছু অসাধু চক্র প্রশ্ন ফাঁস করে মানুষজনকে বিলি করে আসছে টাকার বিনিময়ে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কোনো অভিভাবক আমাদের তথ্য দেননি।
প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কমিটির গাফিলতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষা কমিটির কাজ হচ্ছে প্রশ্নপত্র ছাপানো থেকে শুরু করে নিরাপদে পরীক্ষা হলে পৌঁছানো এবং পরীক্ষাটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। এই কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে যেভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, সেটি আমরা জানার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকলে তাকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কোনো চাপ থাকে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত থাকে তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনি। কোনো তথ্য এলে তা আমরা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২২
পিএম/এমজেএফ