ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাবনায় মেম্বারকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ, টিসিবি পণ্য বিক্রি বন্ধ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
পাবনায় মেম্বারকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ, টিসিবি পণ্য বিক্রি বন্ধ আহত মেম্বার ও অভিযুক্ত চেয়ারম্যান

পাবনা: পাবনায় টিসিবির পণ্য বিক্রিকে কেন্দ্র করে একাধিক ওয়ার্ড মেম্বারকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাজাহানের বিরুদ্ধে।  

রোববার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে পাবনা সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়ন পরিষদে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান শাজাহান বলেন, ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলে পণ্য বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। এখানে কাউকে গায়ে হাত বা লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কার্ড ছাড়া এখানে পণ্য দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।  

বৈরী আবহাওয়ার কারণে ১৬২টি কার্ডের পণ্য বিক্রি না হওয়ায় সেখানে উপস্থিত মেম্বাররা সেই পণ্য ভাগ করে নিতে চান। আমি সেটি না দেওয়ায় তারা আমার ওপরে ক্ষিপ্ত হয়। বেচে যাওয়া পণ্যগুলো আমাকে রেখে দিতে বলেছেন ইউএনও স্যার। আমি কোনো অন্যায় কাজ করিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছে মেম্বাররা। কিছু মেম্বার আমার বিরুদ্ধে আছেন, তারাই এই অপকর্ম করতে চেয়েছেন আমি হতে দেইনি। আর গায়ে হাত দেওয়ার ঘটনা মিথ্যা-বানোয়াট।

উপস্থিত একাধিক মেম্বার ও স্থানীয়রা জানান, সাধারণ মানুষদের মাঝে সরকারের দেওয়া টিসিবির বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হচ্ছিলো দুলাই ইউপি পরিষদ চত্বরে। সকাল থেকে শুরু হওয়া এই পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের শেষের দিকে চেয়ারম্যান তার নিজ ক্ষমতার দাপটে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দের মানুষদের মাঝে পণ্য বিক্রি করতে থাকেন। এসময় উপস্থিত ওয়ার্ড মেম্বাররা তাকে বাধা দিলে তিনি তাদের গায়ে হাত তোলেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এসময় পণ্য নিতে আসা সাধারণ মানুষ ও মেম্বাররা হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এই সময় মেম্বাররা প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উপস্থিত সব মেম্বারদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। এসময় এক নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. মকবুল হোসেন এগিয়ে এলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডারবাহিনী। এসময় তিনি তার বিরুদ্ধে কথা বল্লে সব মেম্বারদের পরিষদে আসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে দুলাই ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। যেকোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে পণ্য নিতে আসা গ্রামের সাধারণ মানুষেরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে পণ্য না পেয়ে বাড়িতে চলে যান। ঘটনার পরে স্থানীয় মেম্বাররা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিলে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন তিনি। এদিকে চেয়ারম্যানের হাতে লাঞ্ছিত এক মেম্বার বর্তমানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সুজানগর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ঘটনার প্রর্তক্ষদর্শী পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. রহমাত আলী বলেন, আমরা ভয়ের মধ্যে আছি ভাই। জনপ্রতিনিধি হয়ে চেয়ারম্যান তার খেয়ালখুশিমত কাজ করতে চান। তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বল্লেই তিনি আমাদের বাজে ভাষায় গালিগালাজ করেন এমনকি মারতে আসেন। আজ আমাদের বেশ কয়েকজন মেম্বারের গায়ে হাত দিয়েছেন তিনি। পরিষদে ক্যাডারবাহিনী নিয়ে তিনি চলাচল করেন। টিসিবির মাল মানুষ টাকা দিয়ে নেবে। এখানে তিনি তার পছন্দের মানুষদের ঢালাওভাবে দিতে চান। আরে ভাই এখানে ঢালাওভাবে তো দেওয়া যাবে না। দরিদ্র, মধ্যবিত্ত, অসহায় মানুষদের দিতে হবে। তার জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তিনি কোনো নিয়ম মানতে রাজি না। আমরা এই জালিম, নির্যাতনকারী চেয়ারম্যানের সঙ্গে কাজ করতে পারছি না। আমাদের বাঁচান, তার কঠিন শাস্তির দাবি করছি আমরা।

ঘটনার বিষয়ে টিসিবির দায়িত্বরত ডিলার রতন কুমার সাহা বলেন, সেখানে তেমন কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। হাতাহাতি বা মারামারি আমার চোখের সামনে হয়নি। কথা কাটাকাটি হয়েছে মেম্বারদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের। কার্ডের বাহিরে কোনো মাল দেওয়া হয়নি। পণ্য বিক্রির শেষে কয়েকজন কার্ড নিয়ে মাল নিতে আসে। এই মাল দেওয়াকে কেন্দ্র করেই সেখানে একটু ঝামেলা হয়েছে। তবে সেটি তেমন কোনো বড় ধরনের ঘটনা নয়। চেয়ারম্যান মেম্বারদের সঙ্গে সমন্বয় করেই মাল দেওয়া হচ্ছে। ইউএনও স্যারের নির্দেশ মোতাবেক আমরা কাজ করি। কোনো ধরনের অনিয়মের সুযোগ এখানে নেই।

ঘটনার বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, টিসিবির পণ্য বিক্রি নিয়ে স্থানীয় দুলাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মেম্বারদের ঝামেলা হয়েছে। বিষয়টি আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন তারা। টিসিবির পণ্য বিক্রিতে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় মেম্বারদের লাঞ্ছিত করেছেন চেয়ারম্যান। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। মেম্বররা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছেন। ঘটনার তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

সুজানগর ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় এক মেম্বার আমাকে মোবাইল ফোনে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছে। চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ দিয়েছে। চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। ঘটনার বিষয়ে আমাকে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টিসিবির পণ্য বিক্রিতে কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।