খুলনা: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) এটি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। তবে এর ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে খুলনার হাজার হাজার কৃষক।
(২৪ অক্টোবর) সোমবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাসের কারণে আমন ক্ষেত হেলে পড়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় আমন ও শীতকালীন আগাম শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক। শুধু ফসলেরই নয়, মৎস্য চাষিদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। অনেক জায়গায় নিচু এলাকায় হাঁটুপানি জমেছে। পাকা-আধা পাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর গ্রামের কৃষক মেহেদী হাসান বাবলু বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত ও বাতাসের ঝাপটায় আমনের ক্ষেত, সিম ও লাউ করোলাসহ শীতকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
একই উপজেলার খলশী গ্রামের মাসুদ রানা নামের এক কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, ঘাম ঝরা শ্রমের নিবিড় পরিচর্যায় ধান ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে কৃষকদের স্বপ্ন তছনছ করে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়।
মলিন মুখে কৃষক জানান, ঝড়ের কারণে সিম, ফুলকপিসহ শীতকালীন শাক-সবজির প্রায় ১ একর জমির ফসল তার নষ্ট হয়েছে। তিনি জানান, তার মতো এলাকার শত শত কৃষক ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার বরুণ পাড়া গ্রামের ধান ক্ষেতের মালিক রণজিৎ বলেন, ঝড়ে আমন ধানের ক্ষেতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কিছু গাছপালা ভেঙে গিয়েছে।
ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার ন্যায় দাকোপ, পাইকগাছা, দিঘলিয়া, তেরোখাদা ও রূপসা উপজেলায় বর্ষণে আমন ধান ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে অনেক কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে তোলার জন্য স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। বৃষ্টিতে আগাম শীতকালীন ফসলের জমি জলমগ্ন ও জোয়ারের পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির তালিকা তৈরি করছেন তারা।
তবে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলায়। এলাকার একাধিক কৃষক জানান, প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সাধারণত ভাদ্র মাসের দিকে বর্ষার বৃষ্টি কমে আসার সাথে সাথে শঙ্খচরের কৃষকরা আগাম শীতকালীন সবজি বেগুন, মূলা, শিম, বরবটি, তিত করলা, ঢেড়শ, মিষ্টি লাউ, শশা, খিরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজির বীজ রোপন করে থাকেন।
ফসল নিয়ে কৃষকদের স্বপ্ন ছিল অনেক। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন পানির সাথে মিশে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. মোছাদ্দেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঝড়ের কারণে শীতকালীন সবজি বিশেষ করে শীমের ফুল ঝরে যেতে পারে। রোপা আমন যে ধানগুলো পেকে গেছে, তারও ক্ষতি হতে পারে।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝোড়ো হওয়া ও ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলবদ্ধতায় ও বাতাসে জেলার ১৭ হাজার ৯শ’ ৪২ হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ২৯৩ হেক্টর সবজির ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
এমআরএম/এজে