ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

ব্রিটিশ এমপিদের বাংলাদেশ ভাবনা-৩

সতর্ক থাকতে হবে, মার্টিন হারউড

সৈয়দ আনাস পাশা, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৪
সতর্ক থাকতে হবে, মার্টিন হারউড

লন্ডন: সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের ব্যাপক আগ্রহ দেশ-বিদেশে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল ও প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। ১৬ জানুয়ারি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক ও এই বিতর্কে অংশ নেওয়া এমপিদের কোনো কোনো মন্তব্য ভিন্ন ভিন্নভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে।



কেউ বলছেন এমপিরা পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়েই পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ে কথা বলছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন দেশটি সম্পর্কে অনেক এমপির মন্তব্যে ব্যাপক তথ্য ঘাটতি রয়েছে।

দেশে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কৌতূহল বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ বিষয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের সাম্প্রতিক এই আগ্রহের কারণ জানার চেষ্টা করেছে বাংলানিউজ। এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন এমপির কাছে কয়েকটি প্রশ্ন রাখলে বাংলানিউজের এই উদ্যোগে সাড়াও দেন তারা।

ব্রিটিশ এমপিদের কাছে মূলত বাংলাদেশ নিয়ে এমপিদের আগ্রহের মূল কারণগুলো জানতে চাওয়া হয়। বাংলানিউজের সঙ্গে ব্রিটিশ এমপিদের বাংলাদেশ বিষয়ক এই ভাবনা নিয়েই আমাদের প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের কেন এতো আগ্রহ?’। প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্বে ক্ষমতসীন জোট সরকারের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স কমিটির কো চেয়ার মার্টিন হরউড এমপির বাংলাদেশ বিষয়ক ভাবনা পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো।

১৬ জানুয়ারি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দীর্ঘ বিতর্কে অংশ নিতে গিয়ে মার্টিন হরউড বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্জন ও ঐতিহ্যগতভাবে প্রাপ্ত সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, রাজনীতি, ব্যবসা ও ব্রিটেন-বাংলাদেশের কূটনৈতিক বন্ধন সম্পর্কে নিজ মতামত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থান নিয়েও তিনি সমালোচনা করেন তাঁর বক্তৃতায়। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্তকে সম্ভবত টেকনিক্যালি গ্রহণযোগ্য ছিল বলে মন্তব্য করে হাউস অব কমন্সের বিতর্কে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্যপুষ্ট একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন থাকলেও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এই কমিশনের প্রতি সিভিল সোসাইটি ও কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের আস্থা সংকট রয়েছে। মার্টিনের এই মন্তব্য নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থকদের রয়েছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া।
New_Image1
তারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের কারণ সম্পর্কে এপিপিজি চেয়ারের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে সরকার ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছে।

তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি ছাড়াও যে জাতিকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব তা বার বার বোঝানোর চেষ্টা করা সত্ত্বেও মার্টিন হরউডের এমন মন্তব্য মানতে নারাজ তারা।

ভোটাররা চাইলেও কোনো একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার বলে মনে করেন ব্রিটিশ এমপি মার্টিন হারউড। তবে নিজ নিজ দলের সমর্থনে লবিং করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের অধিকারের পক্ষে তিনি।

নিজ নিজ দলের পক্ষে লবিং করার যে প্রচলিত অভ্যাস রয়েছে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের তা ব্রিটেন ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য কতটুকু সহায়ক এবং এ অভ্যাসটি কি ব্রিটিশ এমপিদের সমর্থন করা উচিত- বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে মার্টিন হরউড উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তবে ভোটারদের লবিং করার অধিকার থাকলেও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল সম্পর্কে ধারণা না নিয়ে কোনো এমপির সেই সংগঠনটির পক্ষ নেওয়া ঠিক নয় বলেও মনে করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপে আমার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির কোনো সহযোগী সংগঠন বা সমর্থিত জোট থাকলে আমি সেটির পক্ষ নিতে পারি। যেমন রাশিয়ার ইয়াবলোকো ও ইউকরেইনের ইউরোপিয়ান পার্টির একটি সাম্প্রতিক আহ্বানে সাড়া দিয়েছি আমি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমাদের কোনো সহযোগী সংগঠন নেই। সুতরাং আমার এলাকার ভোটাররা চাইলেও বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নেওয়ার বিষয়ে আমাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের সাম্প্রতিক আগ্রহের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিবডেম দলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক কমিটির কো চেয়ার মার্টিন হরউড দেশটির বাংলাদেশি কমিউনিটির স্পন্দনশীলতাকে অন্যতম একটি কারণ বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এটি শুধু স্থানীয় অর্ধমিলিয়ন বাংলাদেশির সংখ্যার কারণেই নয়, ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য ব্যবসার বিস্তৃতিও এর অন্যতম একটি কারণ।

মার্টিনের মতে, ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা কমিউনিটি কর্মকাণ্ড এবং রাজনীতিতে আগ্রহী ও সম্পৃক্ত থাকায় স্থানীয় এমপিরা নিয়মিতই নিজ নিজ এলাকার বাংলাদেশি ভোটারদের সঙ্গে মিলিত হয়ে থাকেন। ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমপিরা সবসময়ই থাকেন আপডেট ও সচেতন। আর এ কারণেই বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে এমপিরা নিয়মিতই নিজেদের অবস্থান প্র্রকাশ করতে আগ্রহী থাকেন।

সম্প্রতি হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশ বিষয়ক একটি বিতর্কে কয়েকজন ব্রিটিশ এমপির মন্তব্য কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, পর্যাপ্ত তথ্য না জেনেই কয়েকজন এমপি বাংলাদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে মার্টিনের মতামত জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শরিক লিবডেম দলীয় এই এমপি বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশের মুক্ত পার্লামেন্টেই নিজেদের ভোটারদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

এ বিষয়ে উদাহরণ দিতে গিয়ে এই ব্রিটিশ এমপি বলেন, ঢাকায় বাংলাদেশের পার্লামেন্টে ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন পলিসি নিয়ে আলোচনা হতে পারে, যদি প্রমাণ হয় যে এই পলিসির কারণে বাংলাদেশে বসবাসরত আমাদের এলাকার ভোটারদের আত্মীয়-স্বজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একইভাবে কোনো ইস্যুতে আমাদের এলাকার ভোটারদের স্বার্থ জড়িত থাকলে ব্রিটেনেও আমরা বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনা করতে পারি।

এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি পার্লামেন্টে আমরা শ্রীলঙ্কা, ইউক্রেইন, সাউথ সুদান, ইরাক, ইরান ও অন্যান্য এলাকা নিয়ে কথা বলেছি। এটিই হলো গণতন্ত্র, এটিই হলো আমাদের বাক স্বাধীনতা।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ