ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

অটিস্টিক শিশুর বেড়ে ওঠার সমান অধিকার রয়েছে

শিহাবউদ্দীন কিসলু,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৪
অটিস্টিক শিশুর বেড়ে ওঠার সমান অধিকার রয়েছে ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নিউইয়র্ক: অটিস্টিক শিশুরা এখন আর সমাজের বোঝা নয়। তারা আমাদেরই সন্তান।

একজন সুস্থ সবল শিশুর মতো তাদেরও বেড়ে ওঠার সমান অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ-এর জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের নর্থ লন ভবনের সম্মেলনে কক্ষে অটিজম সচেতনতা ও করণীয় শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, দেশের ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে অটিজম আজ আন্তর্জাতিক সমস্যা। এ সমস্যা দূরীকরণে পারিবারিক পর্যায়ে থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষ মনোযোগই মূল হাতিয়ার।
|
তিনি বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকে কোনো রকম হেলা না করে তার বিকাশের সম্ভাবনাটুকু যাচাই করে তাকে সহযোগিতা করতে হবে।

এ সময় অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে তিনি বিশ্ববাসীর প্রতি তিনি উদাত্ত্ব আহ্বান জানান।

সেমিনারে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম আন্দোলনে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত নানান পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন তার পাঠানো ভিডিও বার্তায় বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অটিজম আক্রান্তদের সহায়তায় আরো বড় পরিসরে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাত্ত্বিকভাবে আমরা যা বুঝতে সক্ষম, সব ক্ষেত্রেই এর চর্চা হয় না।

তিনি বলেন, শুরুতেই অটিজম আক্রান্তদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি ভবিষ্যতে চাকরির উপযোগী করে গড়ে তুলতে শিক্ষা ক্ষেত্রেও সহযোগিতা দিতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব তার বার্তায় অটিজমসহ সব ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।

উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

এ পর্বে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন- কাতারের স্থায়ী প্রতিনিধি আলিয়া আহমেদ সাঈফ আল-তাহনি, ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি অশোক কুমার মুখার্জি, যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি এলিজাবেথ কসেন্স, নাইজেরিয়ার উপস্থায়ী প্রতিনিধি উসমান সারকি, জাতিসংঘ মহাসচিবের দফতর প্রধান সুসানা মালকোরা এবং অটিজম স্পিকসের সহপ্রতিষ্ঠাতা সুজান রাইট।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন অটিস্টিক শিশুদের রক্ষায় সাত দফা কর্মকৌশল তুলে ধরেন। তা হলো- দক্ষ, অভিজ্ঞ প্রশিক্ষিতদের তত্ত্বাবধানে রাখা, বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচির ব্যবস্থা করা, প্রত্যেক শিশুর বিশেষ চাহিদা পূরণ করা, বিকলাঙ্গ শিশুদের আর্থিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং মানসিক ও শারীরিক উভয় ধরনের অটিস্টিক শিশুদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেওয়া।

এছাড়া অটিজম আন্দোলন বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে এবং এ ব্যাপারে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি জোরদার করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের এ বিষয়ে রেজুলেশন প্রদানের আহ্বান জানান ড. মোমেন।

বার্তায় জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন অটিজম শিশুদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অটিজম আক্রান্তদের কোনো ধরনের কষ্ট দেওয়া বা তাদের উপেক্ষা করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।

তিন পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন মার্কিন টেলিভিশন ডব্লিউএবিসি’র জনপ্রিয় উপস্থাপক ও সাংবাদিক বিল রাইট।

দ্বিতীয় পর্বে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ছাড়াও প্যানেল আলোচক ছিলেন জাতিসংঘ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জ্যাকব কুমারেসান, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান আকিকো ইতো এবং ইউনিসেফের শিশু ও প্রতিবন্ধী অনুষ্ঠান বিশেষজ্ঞ লিভে স্যাবে।

সেমিনারের সঞ্চালক সাংবাদিক বিল রিটারের এক প্রশ্নের জবাবে পুতুল বলেন, অটিজম আন্দোলনে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

বিশেষ করে শিশুদের জন্ম নিবন্ধন, অটিস্টিক শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে পারিবারিক ভূমিকা, জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি বিষয়ে বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে বিশ্ববাসীর স্বীকৃতি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের অটিজম মোকাবেলার আন্দোলনের এই নেত্রী বলেন, অটিস্টিক শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়ক প্রশিক্ষণ প্রদানে বিশেষ মডিউল তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটও গড়ে তোলা হয়েছে।

সমাপনী বক্তব্যে সায়মা ওয়াজেদ বলেন, অটিজম মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা, যা শিশুর জন্মের তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে থাকে।

বিশ্বের অটিজমের তথ্যচিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ৮৮ জনের একজন এবং সারাবিশ্বে মোট ৭০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৭ কোটি মানুষ অটিজমে আক্রান্ত।

তিনি বলেন, প্রতিবছর যে সংখ্যায় এইডস, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের মতো রোগে শিশুরা আক্রান্ত হয়, তার চেয়ে বেশি সংখ্যায় যোগ হচ্ছে অটিস্টিক শিশু। আমাদের দেশে গত দুই বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে পারি এই অটিজম আক্রান্তদের জন্য দরকার বহুমুখী সহায়তা।

বাংলাদেশের প্রস্তাবে মানসিক প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

দুপুরে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে দেশি-বিদেশি অতিথিদের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে পুতুল অংশ নেন। এ সময় তিনি অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ