ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

নিউইয়র্কে জাহানারা ইমামের ৮৫ তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপিত

স্বীকৃতি বড়ুয়া | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৪
নিউইয়র্কে জাহানারা ইমামের ৮৫ তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপিত

নিউইয়র্ক: ৭১’এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের উদ্যোগে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৮৫তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপিত হল গত ৩ মে, শনিবার জ্যাকসন হাইটসের ফুড কোর্ট রেস্টুরেন্টে।

আলোচনা সভার শুরুতেই কমিটির উপদেষ্টা প্রয়াত রতন বড়ুয়া ও কমিটির উপদেষ্টা সফি চৌধুরীর ভাই প্রয়াত সাইফুল্লাহ চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের সভাপতি ফাহিম রেজা নূরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আলোচকবৃন্দ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে স্মৃতিচারণ করেন।

সংগঠনের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট চলচিত্রকার কবির আনোয়ার বলেন, কিছু কিছু নাম আছে যাদের কথা চিন্তা করলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সে রকম একটি নাম। মুক্তিযুদ্ধের পর সন্তান হারানোর শোককে তিনি শক্তিতে রূপান্তরিত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। যারা জাহানারা ইমামের মত আমাদের জাতীয় জীবনে ত্যাগ শিকার করেছেন তাদের সবাইকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।

সাপ্তাহিক বাঙালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ শহীদ জাহানারা ইমামের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ইতিহাসে দেখা যায় কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়, তারপর তারা একটি জনগোষ্ঠীকে কিংবা একটা জাতিকে নেতৃত্ব দেয়। জাহানারা ইমাম সেরকম একজন নেত্রী। জাহানারা ইমাম কেন জাহানারা ইমাম হয়ে উঠলেন, তার মূলে রয়েছে একটি বই একাত্তরের দিনগুলি। এই বইটি লেখার পর, সাধারণ জনগণের থেকে অসাধারণ সাড়া পেয়েছেন তিনি।

মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে পেয়েছে এই বইয়ের মাধ্যমে। এই বই জাতির জন্য এক বিশাল পাওয়া।

৯১ সালের মে মাসে জাহানারা ইমাম যখন নিউজার্সিতে এসেছিলেন, সেই খবর দিয়েই সাপ্তাহিক বাঙালির প্রথম সংখ্যা বের করার গৌরবগাঁথার কথা সবাইকে জানান কৌশিক আহমেদ।

সংগঠনের সহ-সভাপতি নিনি ওয়াহেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, জননী জন্মভূমি যেমন আমাদের ভাষার সাথে জড়িত, তেমনি জাহানারা ইমামও আমাদের কাছে জননী জন্মভূমির মত। আমরা একাত্তরে একটি ভূমি অর্জন করেছি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরে আমাদের যে বিপর্যয়, তারপর যুদ্ধের স্মৃতি যে আমাদের ভুলে যাওয়ার পথে ছিল– সেরকম একটি মুহূর্তে জাহানারা ইমামের বই একাত্তরের দিনগুলি এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির যে সূচনা তিনি করে দিয়ে গেছেন, সেটার ধারাবাহিকতা কিন্তু আজকের গণজাগরণ মঞ্চ এবং কাদের মোল্লার ফাঁসি। উনি আমাদের গর্ব ও জাতির গর্ব ছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই মহিয়সী নারী রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন, এটা আমাদের জন্য সত্যি লজ্জার বিষয়।

সংগঠনের প্রাক্তণ সাধারণ সম্পাদক ও কবি হাসান আল আব্দুল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি একটি অসাধারণ বই, এটি বাংলাদেশের সবার পাঠ করা উচিৎ।

সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মা হচ্ছেন জাহানারা ইমাম, তার বই মুক্তিযুদ্ধকে জীবন্ত করে তুলেছিলো। এই বইয়ের কারণে উনি আমাদের গৌরব ও সংগ্রামের একটি অংশ হয়ে আছেন।

মুক্তিযুদ্ধের পরে যে অসমাপ্ত কাজ ছিল -যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সেই সময় এই মহীয়সী নারী আন্দোলনের স‍ূচনা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আমাদেরকে একটা জায়গা করে দিয়ে গেছেন। এখন আমাদের উচিৎ আত্মঘাতী কাজে লিপ্ত না হয়ে, জাহানারা ইমামের আন্দোলনকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাহলেই উনার প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে।

সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক মণ্ডলীসহ উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশ যতদিন যুদ্ধাপরাধী মুক্ত ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত না হবে ততোদিন প্রবাস থেকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলনে সোচ্চার থাকার কথা ব্যক্ত করেন।

সমাপনী বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ফাহিম রেজা নূর শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তার আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার ওপর আলোকপাত করেন।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা সফি চৌধূরী হারুন, সহ-সভাপতি নাজনীন সীমন, দপ্তর সম্পাদক গোপাল স্যান্নাল, মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন, ফোরাম ফর সেক্যুলার বাংলাদেশ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া চৌধুরী, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, উপন্যাসিক সুবক্তগীন সাকী, ওবায়দুল্লাহ মামুন, সেমন্তী ওয়াহেদ, একক সৌবীর প্রমুখ।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা ও সাপ্তাহিক বর্ণমালার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, হেলাল মাহমুদ, আকবর হায়দার কিরণ, জেবু চৌধুরী, মোক্তার হোসেন, শিপুল বড়ুয়া, মিস ডেইজী, আনোয়ার উদ্দিন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ