ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

‘কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ও কথা বলিনি’

শিহাবউদ্দীন কিসলু , স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৪
‘কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ও কথা বলিনি’ শারমিন আহমদ

নিউইয়র্ক: ‘আমার বক্তব্যকে যেন কেউ কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নে বা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে। কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আমি কথা বলিনি’-একথা বলেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমদ।



সম্প্রতি নিউইয়র্কে প্রগেসিভ ফোরামের এক আলোচনা সভায় ‘কেউ ভিন্নমত পোষণ করলেই রাজাকার বলে দেওয়ার প্রবণতা ঠিক নয়’ এমন একটি মন্তব্য নিয়ে সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় হওয়ার পর বাংলানিউজের কাছে একান্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন শারমিন আহমদ।  

‘আমার খণ্ডিত বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। পুরো কথা তুলে ধরা হলে তাতে ভুল বোঝার সুযোগ থাকতো না। আর কেউ যেন কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নে বা অসৎ উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্য ব্যবহার না করেন’ -বলেন ক্ষুব্ধ শারমিন আহমদ।

মরহুম তাজউদ্দীন তনয়া গত ৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে প্রগ্রেসিভ ফোরামের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন।

ওই বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে জ্ঞান দিয়েছেন মেধা ও বিবেক দিয়েছেন সবকিছু যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কিন্তু আমাদের  জাতিগত চরিত্রই যেন হয়ে গেছে, আমার পছন্দ না হলে প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি ভাল না হয় মন্দ। স্বাধীনতার পক্ষে বা স্বাধীনতার বিপক্ষে। এটা কিভাবে সম্ভব! সত্য প্রশ্ন করলে কিভাবে একজন মানুষকে রাজাকার বা আলবদর বলে দেওয়া হয়! এই ধারা ভয়াবহ। এই ধারার অবসান ঘটাতে হবে’।

শারমিন আহমদের ওই বক্তৃতা বাংলাদেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এতে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর ধারাবাহিকতায় বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বিষয়গুলোর গভীরে গিয়ে আরো বিস্তারিত কথা বলেন তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা।

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উত্তরসুরি কোনো বিপরীত আদর্শের প্রতিনিধি হতে পারেনা’ এভাবেই নিজের অবস্থানকে তুলে ধরেন শারমিন আহমদ।  

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের বাঁচাতে খন্দকার মোস্তাক ক্ষমতায় বসে অধ্যাদেশ জারি করেন। আর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ঘৃণিত ৫ম সংশোধনী পাশ করে বিচারের পথই স্থায়ীভাবে রুদ্ধ করে দেন। এটা কোন সভ্য জগতে সম্ভব!’

জিয়া’র শাসনামলে তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশে কেউ সাহস করেনি। একপর্যায়ে সচিত্র সন্ধানী কেবল লেখাটি প্রকাশ করে। এরপর  ২০০৪ সালেও দেখলাম বিএনপি সরকারের আমলে জেলহত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত সব বিএনপি নেতা বেকসুর খালাস পেয়ে গেলো। আর একথাগুলোই প্রগ্রেসিভ ফোরামের সম্মেলনে বলেছি, বলেন শারমিন আহমদ।

এছাড়া ৮০’র দশকের মধ্য সময়ে এরশাদ সরকারের আমলে খুনী ফারুক রশীদরা বাংলাদেশে ফিরে আসে এবং ফ্রিডম পার্টির রাজনীতি শুর করে। এসময় বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। কিন্তু মাত্র গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই ভয়ে মুখ খোলেননি, বলেন শারমিন।  

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, জেলহত্যা তদন্ত কমিটির সদস্য বিচারপতি কে এম সোবহান এবং ব্রিগেডিয়ার আমিনুল হক বীর উত্তম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ এস এম মহসীন বুলবুল অ্যাডভোকেট এম এ বারীই কেবলমাত্র সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, জানান তাজউদ্দীন তনয়া।

ঢাকার কিছু পত্রিকা খণ্ডিত ও অস্পষ্টভাবে তার বক্তব্য প্রকাশ করেছে অভিযোগ করে শারমিন বলেন, ‘আমার বক্তব্যকে যেন কেউ কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নে ও অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্যই বাবার আদর্শকে ধারণ করে সত্যকেই সবার সামনে তুলে ধরতে চাই, বলেন তিনি।

পুনরায় জেলহত্যা মামলার তদন্তের উদ্যোগে বর্তমান সরকারের প্রশংসা দিয়ে শুরু করেন শারমিন আহমদ। বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ধারবাহিকতাতেই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। শুনে খুশী হয়েছি, জেলহত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারে পুনরায় তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।

‘এটা সত্যিই আশার কথা যে, ৭৫’র বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ জনগণের যে ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তা বাস্তবায়নে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, এম. মনসুর আলীর খুনীদের বিচারে পুনরায় তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে’।

আওয়ামী লীগ সরকারই বিচার কাজ শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে একটি সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের আদর্শের বিপরীত চেতনাকে ধারণ করে কেউ বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধি হতে পারেনা।   বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানীদের হত্যার মাধ্যমে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারীরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই হত্যা করতে চেয়েছে’।

নিউইয়র্কে বাংলানিউজের সঙ্গে শারমিন আহমদের কথা হয় তার লেখা বইকে ঘিরে সৃষ্ট বিতর্ক নিয়েও। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বরের জেলহত্যাকাণ্ডের ৪৩ বছর পর ২০১৪ সালে শারমিন আহমদ ‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা’ বইটি লেখেন।

তবে, এ বিষয়ে লেখার কাজটি শুরু হয় আরও আগে। শারমীন বলেন, ১৯৮৭ সালে বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও তথ্যের ভিত্তিতে ‘৩রা নভেম্বর জেলহত্যা ও বিবেকের আত্মাহুতি’ প্রবন্ধটি ‘জেলহত্যাকাণ্ড’ বিষয়ে সম্ভবত বাংলাদেশে গবেষণা ভিত্তিক প্রথম লেখা।
 
তার বইয়ের কোনো কোনো তথ্যকেও ভুলভাবে ব্যখ্যা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে শারমিন বলেন,  যে তথ্যটিকে নেতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, সেটি যে নেতৃত্বের দূরদর্শিতার ইতিবাচক দিক হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছে তা এখানে আড়াল হয়ে যাচ্ছে!

আবেগাপ্লুত শারমিন আহমদ বলেন, কেবল পিতা হিসেবেই নয়, নেতা হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের অভাব ভীষণভাবে অসহায় করে তোলে তাকে। কারণ, তিনি তো জাতীয় নেতা, দেশের নেতা ছিলেন।

বাংলাদেশ সময় ০১০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ