বর্তমান বিশ্বে ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। ভূমিকম্প হওয়ার অন্যতম কারণ পাহাড় ধ্বংস হওয়া।
ভূমিকম্প সাধারণত তিন ধরনের হয়- প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়: ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতিজনিত কারণে।
ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেণ্ড থেকে ১-২ মিনিট স্থায়ী হয়। তবে কিছু কিছু ভূমিকম্প ৮-১০ মিনিটও স্থায়ী হয়।
স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্পে তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও শক্তিশালী ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। কম্পনের মাত্রা ৩ এর নিচে হলে সাধারণত টের পাওয়া যায় না। এর মাত্রা ৩ এর বেশি হলে কম্পন অনুভব করা যায়। আর ভূ-কম্পনের মাত্রা ৭ থেকে শুরু করে ওপরে হলে একটা গোটা শহর বা এলাকা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ইতিহসের ভয়াবহ ভূমিকম্পের তথ্য তুলে ধরা হলো-
চীন: ১৫৫৬ সালের ২৩ জানুয়ারি ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে চীনের শানশি ও আশপাশের প্রদেশ কেঁপে ওঠে। ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচনা করা হয় এটিকে। এ ভূমিকম্পে আনুমানিক ৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষের নিহত হয় বলে জানা গেছে।
লিসবন: লিসবন পর্তুগালের রাজধানী। ১৭৫৫ সালের ১ নভেম্বর লিসবনে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭। শহরটির প্রায় অর্ধেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল এ ভূমিকম্পে।
চিলি: চিলি লাতিন আমেরিকার দেশ। এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ১৯৬০ সালে একটি ভূমিকম্প হয়। ৯ দশমিক ৫ মাত্রার এ ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিল অন্তত চার হাজার ৪৮৫ জন মানুষ। আহত হয়েছিল ২০ লাখের বেশি।
আলাস্কা: যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য আলাস্কার প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ডে ১৯৬৪ সালে ৯ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর ফলে আলাস্কায় ভয়ংকর ভূমিধস ও সুনামিরও সৃষ্টি হয়েছিল। এতে ১২৮ জনের নিহত হয়। এছাড়া ৩১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়।
উত্তর সুমাত্রা: উত্তর সুমাত্রার পশ্চিম উপকূলে ২০০৪ সালে একটি ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর ফলে সৃষ্ট সুনামিতে অন্তত এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। অনেক লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকার ১৪টি দেশে অনুভূত হয়েছিল এ ভূমিকম্প ও সুনামি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া। দেশটির মৎস্য শিল্প ও কারখানার প্রায় ৬০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যায় এ সময়।
জাপান: ২০১১ সালের ১১ই মার্চ জাপানের পূর্ব উপকূল তোহুকুতে এক ভয়াবহ ভুমিকম্প হয়। ভূমিকম্পটি ৯ মাত্রার ছিল। ভূমিকম্পের পর হয় ভয়ংকর সুনামি। এতে জাপানের ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পারমাণবিক চুল্লি।
কামচাটকা: ১৯৫২ সালের ৪ নভেম্বর রাশিয়া ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয় সুনামি। এ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল কামচাটকা উপদ্বীপ। তিন হাজার মাইলজুড়ে অনুভূত হয়েছিল এ ভূ-কম্পন। এতে নিহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
আরিকা, পেরু (বর্তমান চিলি): ১৮৬৮ সালের ১৩ আগস্ট প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট ৯ মাত্রার ভূ-কম্পন হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত অনুভূত হয়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার আরেকুইপা শহর। সেখানে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।
উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল: ১৭০০ সালের ২৬ জানুয়ারি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। তবে এর কোনো শক্ত প্রমাণ নেই। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প মনে করা হয় এটিকে। এ ভূমিকম্পের পর সুনামিতে ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের পাচেনা উপকূলের অধিবাসীদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
চিলি: ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এ দেশে ফের ভয়াবহ এক ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮। এ ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় ৫২১ জন। আহত হয় অন্তত ১২ হাজার। এ সময় আট লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
ইকুয়েডরের উপকূল: ১৯০৬ সালের ১৩ জানুয়ারি ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার সমুদ্র উপকূলে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সৃষ্টি হওয়া সুনামিতে নিহত হয় ৫০০-র বেশি মানুষ।
আসাম-তিব্বত: ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট বর্তমান ভারতের আসাম ও চীনের তিব্বতে ৮ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এ ভূমিকম্পে আসাম-তিব্বতের ৭০টি গ্রাম ধবংস হয়ে যায়। নিহত হয় হাজার হাজার মানুষ। ভূমিকম্পের পরে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা।
তুরস্ক-সিরিয়া: পৃথিবীর সর্বশেষ ভয়াবহ ভূমিকম্প হয় ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। এটি তুরস্ক-সিরিয়ায় অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৮, উৎপত্তি তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ অঞ্চলে। এ ভূমিকম্পে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত প্রায় ১০ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৩
জেডএ