ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

মানুষ হয়ে ওঠার ১২ তত্ত্ব, তবে সবই ভুল!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
মানুষ হয়ে ওঠার ১২ তত্ত্ব, তবে সবই ভুল! মানুষ হয়ে ওঠার ১২ তত্ত্ব, তবে সবই ভুল!/ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ৬০ লাখ বছর আগে নিকট আত্মীয় গ্রেট এপ বা মহান বানর (শিম্পাঞ্জি) থেকে আলাদা হয়ে মানব বা হোমো জেনাসের সূচনা।

এরপর লাখ লাখ বছরের বিবর্তনের ধারায় আমাদের আধুনিক প্রজাতির মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদের উদ্ভব এবং পুরো পৃথিবীর নেতৃত্ব গ্রহণ।    

ঠিক কোন কোন গুণাবলী স্যাপিয়েন্সকে সমস্ত প্রাণীজগতের মধ্যে অনন্য বা আমাদের পূর্বপুরুষদের মানুষ করে তোলে? কখন, কিভাবে এবং নির্দিষ্ট কি কি অর্জন করেছিল তারা?

গত শতকজুড়ে মানুষের এ বিবর্তন সম্পর্কে ১২টি তত্ত্ব দেওয়া হয়, যেগুলোকে এখন ভুল বলেও উল্লেখ করছেন বিজ্ঞানীরা।

বানর, শিম্পাঞ্জি ও ওরাংওটাং বা বনমানুষসহ প্রাইমেট প্রজাতিগুলোর মধ্যেও সেসব গুণাবলী আংশিক হলেও দেখতে পেয়ে সেসব তত্ত্ব বাতিল করা হয়। মানুষ হয়ে ওঠার ১২ তত্ত্ব, তবে সবই ভুল!/ছবি: সংগৃহীত

মানুষ হয়ে ওঠার প্রথম তত্ত্ব হচ্ছে, পাথরের অস্ত্র আবিষ্কার ও তার ব্যবহার। হোমো হ্যাবিলিস প্রজাতি ২৮ লাখ বছর আগে প্রথমবারের মতো এ অর্জন করে, যাকে নৃতত্ত্ববিদ কেনেথ ওয়েকলি ১৯৪৪ সালে ও ১৯৬০ সালে লুই লিকি মানুষের অনন্য আবিষ্কার বলে উল্লেখ করেছিলেন।  

কিন্তু লাঠি ও বিশেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য পাথরের রুপায়ণ মানুষের প্রথম তৎপরতা ছিল না বলে জানান জেন গুডঅলসহ অন্য গবেষকরা। তাদের মতে, শিম্পাঞ্জিরাও লাঠি ব্যবহার করে ভূ-গর্ভস্থ পোকা-মাকড় ও মাছ খুঁজে, এমনকি কাক মেরে খেতে শেখে আগে থেকেই, যা তাদের হাতের অভাব মেটায়।

নৃ-তত্ত্ববিদ রেমন্ড ডার্ট বলেছিলেন, আমাদের পূর্ববর্তী বনমানুষরা মাংসাশী, শিকারি ও খুনি প্রাণীতে পরিণত হওয়ায় মানুষ তাদের চেয়ে ভিন্ন বলে বিবেচিত হয়। শিকার করা প্রাণীদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন ও ভেঙে খাওয়া এবং তাজা রক্ত দিয়ে তৃষ্ণা মেটানো উল্লুকদের হটিয়ে বুদ্ধিমত্তাই তাদেরকে নেতৃত্বে বসায়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর ডার্টের এ ‘হত্যাকারী উল্লুক’ তত্ত্ব পরিত্যক্ত হয়।

১৯৬০ সালে নৃ-তত্ত্ববিদ গিলিন ইসহাক বলেন, শিকার করা মাংস পুরো কমিউনিটির সঙ্গে ভাগ করা এবং সামাজিক আচরণ উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষ নেতৃত্বে চলে যায়। কিন্তু অনেক প্রাণীই এ কাজ করে। মানুষ হয়ে ওঠার ১২ তত্ত্ব, তবে সবই ভুল!/ছবি: সংগৃহীত

আবার, টিভি তথ্যচিত্র লেখক ইলেইন মরগ্যান দাবি করেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা ভিন্ন পরিবেশ বা পানির কাছাকাছি প্রসূত হওয়ায় অন্যান্য প্রাইমেটদের থেকে ভিন্ন হয়। শরীরের চুল কমে যাওয়া তাদেরকে দ্রুত সাঁতারু হিসেবে তৈরি করে, যখন দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে শেখে তারা। ‘জলজ বনমানুষ’ নামের এ হাইপোথিসিসও প্রত্যাখ্যান করেন বিজ্ঞানীরা।

প্রত্নতত্ত্ববিদ রিড ফেরিংয়ের বিশ্বাস, আমাদের পূর্বপুরুষরা মানুষে পরিণত হয়, যখন তারা উচ্চবেগে পাথর নিক্ষেপের ক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু জর্জিয়ার ১৮ লাখ বছর বয়সী হোমিনিন সাইটে শিকারি হোমো ইরেক্টাসদের জীবাশ্ম পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, তারা সিংহের আক্রমণে নিহত হয়। কিন্তু প্রাণীগুলোকে তাড়িয়ে দেওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। সুতরাং, পাথর নিক্ষেপের ক্ষমতাও মানুষকে রক্ষা করতে পারেনি। মানুষ হয়ে ওঠার ১২ তত্ত্ব, তবে সবই ভুল!/ছবি: সংগৃহীত

নৃ-বিজ্ঞানী শেরউড ওয়াশবার্ন ও সি এস ল্যানচেস্টার ১৯৬৮ সালে যুক্তি দেন, বাস্তব অর্থে আমাদের বুদ্ধি, স্বার্থ, আবেগ, মৌলিক সামাজিক জীবন, শিকার, অভিযোজন- সব সাফল্যের মূলে ছিল বিবর্তনীয় বড় মস্তিস্ক। এটি সেক্স ছাড়াও নারীদেরকে শ্রম বিভাজন ঘটিয়ে নেতৃত্বে আসীন করেছে মানুষকে। এ তত্ত্ব প্রশ্ন উত্থাপন করে, তাহলে নারীদেরও বড় মস্তিস্ক কেন আছে?

আধুনিক বিজ্ঞানীরা এসব তত্ত্বের বিরোধিতায় বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষেরা এসব গুণাবলী নতুন করে অর্জন করেনি। তারা শুধু আমাদের প্রথম আদি প্রজাতি হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস থেকে শুরু করে সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস হিসেবেই বেঁচে ছিল। আর কোনো একক বৈশিষ্ট্য তারা অর্জন করেনি, যা মানুষ হয়ে ওঠার একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। কারণ, সেখানে কিছু পরিণতি অনিবার্য ছিল। অস্ত্র তৈরি, পাথর ছোড়া, মাংস ও আলুখাদক, সমবায় ভিত্তিক অভিযোজন, বড় মস্তিষ্ক ও হত্যাকারী উল্লুক বৈশিষ্ট্য আমাদেরও আছে এবং এখনও পরিবর্তিত হয়ে চলেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।