ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

এক বনে দুই বাঘ! 

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
এক বনে দুই বাঘ!  সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো তুষার চিতা ও সাধারণ চিতাবাঘকে একই এলাকায় দেখা গেছে, যা উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে জীববিজ্ঞানী ও সংরক্ষণবাদীদের। এ ঘটনা তুষার চিতার বিপন্নতার প্রমাণ বলে মনে করেই উদ্বিগ্ন তারা।   

গত বছরের জুলাই মাসে চীনের কিংহাই প্রদেশের তিব্বতীয় মালভূমি থেকে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শাবকসহ একটি নারী তুষার চিতা সেখানে বসবাস ও সাধারণ চিতাবাঘদের সঙ্গে একই আবাসস্থল ভাগ করছে।  

উষ্ণ জলবায়ু পরিবাহিত উচ্চতম এ স্থানে সাধারণ চিতাবাঘ বসবাস শুরু করায় তুষার চিতার আবাসস্থলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, এ স্থানে দু’টি প্রজাতির বাঘ থাকার প্রথম সচিত্র প্রমাণে বোঝা যাচ্ছে, তুষার চিতা এখন বিপন্ন প্রজাতি।

তুষার চিতাবাঘ সাধারণত তিন হাজার মিটার উচ্চতায় খোলা ও পাথুরে এলাকায় বসবাস করে।

মধ্য এশিয়ার মঙ্গোলিয়া ও চীন এবং দক্ষিণ এশিয়ার আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল ও ভুটানের হিমালয় রেঞ্জসহ ১২টি দেশে বিরল প্রজাতির তুষার চিতাবাঘ দেখা যায়। আনুমানিক ৩ হাজার ৫০০টি থেকে ৭ হাজার বন্য তুষার চিতা এখন পৃথিবীতে টিকে আছে। মূলত চোরাশিকার ও আবাসস্থলের ক্ষতির কারণে বিপন্ন তালিকাভুক্ত হয়েছে প্রাণীটি।

অন্যদিকে প্রচলিত চিতাবাঘের আবাস এর চেয়ে কম উচ্চতায় কম পরিবাহিত বন ও অরণ্যে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সব সময়ই হিমালয় ও এশিয়ার অন্যান্য উচ্চ পর্বতে তুষার চিতার আবাসস্থলে সাধারণ চিতাবাঘেরা তাদের ভূখণ্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন অধিক্রমণের এ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।

‘একটি পরিবর্তিত জলবায়ুতে তুষার চিতার আবাসস্থলে সাধারণগুলো অনধিকার প্রবেশকারী হচ্ছে’- বলেন চীনের প্রাণী সংরক্ষণ সংগঠন প্যান্থেরা’র বন্য বিড়াল সংরক্ষণ কর্মসূচির পরিচালক বায়রন ওয়েকওরথ।  

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, সাধারণ চিতাদের অধিক্রমণের কারণে ওপরের বনবৃক্ষ লাইন ইতোমধ্যে উচ্চহারে ধাক্কাপ্রাপ্ত হচ্ছে। গবেষকদের মতে, অধিক্রমণে হিমালয়ে তুষার চিতার বর্তমান আবাসস্থলের ৫০ শতাংশ বনবৃক্ষ লাইন ও আলপাইন জোন সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ৩০ শতাংশ তুষার চিতার হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

‘বড় হুমকি তুষার চিতার বাসস্থানের ক্ষতি এবং টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া’- বলেন ওয়েকওরথ।

তুষার চিতার বিষয়ে গবেষণা শেষে ইতালির সিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সান্দ্রো লোভারি বলেন, ‘পর্বতে তুষার চিতাবাঘের উর্ধ্বগামী চলাচলের ক্ষেত্র বৃক্ষ লাইন অনুর্বর জমির মধ্যে সঙ্কুচিত হতে পারে। তারা খাদ্য পাবে কি করে?’।

‘সহাবস্থান বা সংঘাতের সম্ভাবনা বন্য শিকারের প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্যের ওপর নির্ভর করে’- বলেন তিনি।
এক বনে দুই বাঘ
২০১৩ সালে নেপালের এভারেস্টের সাগরমাতা জাতীয় পার্কে গবেষণাকালে অধ্যাপক সান্দ্রো লোভারি ও সহকর্মীরা দেখেন যে, সেটি সাধারণ চিতারও একটি বৃহত্তর আবাস উপযোগী ছিল।

‘এলাকাটি পরিবেশগত নমনীয় প্রজাতি সাধারণ চিতার আবাসস্থল হতে পারে। এখানে তুষার চিতার আবাসস্থল দখলের আচরণ থেকেও উন্নত আচরণ করতে পারে’- অধ্যাপক লোভারির ব্যাখ্যা।  

নেপালের অন্নপূর্ণা ও কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতের উচ্চতম এলাকা, যা সাধারণত তুষার চিতাবাঘের অঞ্চল, সেটিকে সম্প্রতি সাধারণ চিতাবাঘের সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

চিতাবাঘ ট্রাস্টের বিশেষজ্ঞ কৌস্তভ শর্মা প্রশ্ন তোলেন, ‘কিভাবে এ দু’টি বিড়াল প্রজাতি ইতোমধ্যে একসঙ্গে বাস করছে? যখন জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের আবাসস্থলও পরিবর্তিত হবে, তখন তাদের সহাবস্থান মুখোমুখি সংঘাতে কঠিন হবে’।


কিছু সংরক্ষণবাদীর ভয়, একই বাসস্থান ও শিকার নিয়ে দুই প্রজাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব হতে পারে। অন্যদের আশঙ্কা,   অধিক্রমণে ইতোমধ্যে তুষার চিতা বহু আবাসস্থলে অস্তিত্বহীনতার হুমকিতে পড়ে গেছে।  

‘সেখানে সাধারণ চিতাবাঘের রং আরও ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। তারা হাইব্রিডও হতে পারে স্থানীয়দের কাছ থেকে দুই আলাদা প্রজাতি সাধারণ ও তুষার চিতার মধ্যেকার জৈবিক সম্পর্কের কথা জানা গেছে’- বলেন ওয়েকওরথ।

অধ্যাপক লোভারি দেখেছেন যে, পুরুষ তুষার চিতাবাঘ প্রজনন মৌসুমে বনভূমির প্রান্তে সাধারণ চিতাবাঘের এলাকায় নেমে আসছে।  

‘কিন্তু সাধারণ ও তুষার চিতা মধ্যে শঙ্করীকরণের কোনো তথ্য নেই। এটি খুবই অসম্ভাব্য হবে, যদিও বাদামী ভালুক ও মেরু ভোঁদরের চেয়ে আরও বেশি সম্ভাবনা ছিল’- বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।