ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

গোধূলি জোনের প্রাণীরা টিকে থাকে যেভাবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
গোধূলি জোনের প্রাণীরা টিকে থাকে যেভাবে গোধূলি জোনের প্রাণী

সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে ২০০ থেকে ১ হাজার মিটার গভীর এলাকাকে গোধূলি জোন বলা হয়। আলো-বাতাসহীন হলেও এ জোনে যে মাছ বাস করে, সেগুলোকে শিকার করা গেলে বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীকে অনেকবার খাওয়ানো যাবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

২০০৯ সালের গবেষণায় জানা গেছে, গোধূলি জোনে অন্তত এক মিলিয়ন প্রজাতির প্রাণীর বসবাস, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকার একটি।

সূর্যালোক গোধূলি জোনের ক্ষীণতম গভীরত্বে পৌঁছাতে পারে।

বাকি অংশ শোষিত হয়ে ওপরের জলের মধ্যে হারিয়ে যায়। এখানকার তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রিরও কম এবং জলের চাপ বর্গইঞ্চি প্রতি ১ হাজার ৪৫০ পাউন্ড। সেখানে সালোক সংশ্লেষণের জন্য পর্যাপ্ত আলো না থাকায় এ গভীরত্বে উদ্ভিদ জন্মায় না।

শুধু এর কাছাকাছি অন্ধকারে অভিযোজিত এমন প্রাণীরাই গোধূলি জোনে বেঁচে থাকতে পারে। অনেক প্রজাতিরই জোনাকির মতো নিজস্ব আলো সৃষ্টির উন্নত কৌশল রয়েছে। যেমন, স্পার্ম তিমি, ঈল ও দৈত্য স্কুইডরা প্রায়ই গোধূলি জোনে খাদ্যের সন্ধানে যায়। তারা ৪ হাজার মিটার পর্যন্ত দূর থেকে সম্ভাব্য শিকারকে শনাক্ত করে শরীরের আঁকড়ি দিয়ে ধরতে পারে।

সমুদ্রের গভীর স্তরের চাপে আমাদের সহজেই কান ফেটে ও ফুসফুস ভেঙে যায়। আর তিমি সেখানে ফুসফুস ও পৃষ্ঠ পরিবর্তন ও প্রয়োজন অনুসারে সংযুক্ত ও সঙ্কুচিত করে, যা অপরিমেয় চাপ প্রতিরোধে সহায়ক। তাদের পাঁজরে অধি নমনীয় তরুণাস্থি রয়েছে, যা বুকের হাঁড়কে নিরাপদে রাখে। ডুবো পানির মাছ, স্কুইড, ঈল, ল্যান্টারফিস বা লণ্ঠন মাছ ও ব্রিস্টলমাউথস্‌সহ জীবন্ত সব প্রজাতিই ব্লাডার ছাড়া গ্যাসে ভরা এ গভীরতায় মানিয়ে নিতে বিবর্তিত হয়েছে।

গভীর সমুদ্রের সবচেয়ে সাধারণ বাসিন্দা ল্যান্টারফিস ও ব্রিস্টলমাউথস্‌দের একটি অপরিমেয় জৃম্ভমান মুখ ও একটি অ্যারোর সঙ্গে সুইয়ের মতো বিষদাঁত রয়েছে। এক আঙুলের চেয়ে ছোট মাছ পরিবার ল্যান্টারফিসের এসব অঙ্গ তাদের অন্ধকারে বাস করতে সক্ষমতা তৈরি করে। আর ব্রিস্টলমাউথস্‌ পাল্টা কৌশলে নিজেদের আলোক সজ্জিত করে শিকারিদের ধোঁকা দেয়।
গোধূলি জোনের প্রাণী
গোধূলি জোন নিয়ে গবেষণা শেষে ডেনমার্কের চারলোটেনলান্ড প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞানী মাইকেল সেন্ট জন বলেন, ‘সেখানকার ভার্চুয়াল অন্ধকারে শিকারি ও শিকারের মধ্যে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলে প্রায়ই। সমুদ্রের যতো গভীরে যাওয়া যায়, ততোটাই অদ্ভুত ও উদ্ভট একটি জগতের সৃষ্টি হয়েছে। নবজাতকের মাতৃগর্ভে থাকার মতো এ প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে গোধূলি জোনের প্রাণীরা নানা উপায়ে বিবর্তিত হয়েছে’।

‘কিন্তু জলচাপ প্রতিরোধে এরাই কেবল গোধূলি জোনের মধ্যে অনন্য শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনে চালিত হয়েছে, তা নয়। বায়ু ও বুদবুদের চাপ প্রতিরোধ করে পৃথিবীর গভীরতম ও অন্ধতম স্বাদহীন এ সমুদ্রতলে যাওয়া ছাড়াও মহাকাশ পর্যন্ত অভিযাত্রী পাঠিয়েছে
মানুষ’।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।