ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

আধুনিক মানুষের মুখ ‘আধুনিক’ নয়! 

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭
আধুনিক মানুষের মুখ ‘আধুনিক’ নয়!  সংগৃহীত ছবি

আমাদের আধুনিক প্রজাতির মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদের মুখ প্রায় স্বতন্ত্র ফ্ল্যাট ও অসাধারণ ভাবপূর্ণ। হয়। কিন্তু অসাধারণ এ মুখ ‘আধুনিক’ নাও হতে পারে, যেমনটি আমরা মনে করি।

কোনো কোনো গবেষক আমাদের মুখ ‘বানরের মতো’ বলে মনে করলেও বেশিরভাগই বলছেন, আমাদের পূর্বপুরুষ বিভিন্ন মানব প্রজাতির বিবর্তিত ও সমন্বিত রুপ এটি।  

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের নৃ-তত্ত্ববিদ ক্রিস স্ট্রিংগার বলেন, ‘মানুষের শেষ জীবিত প্রজাতি হিসেবে আমাদের আধুনিক মুখমণ্ডল বিবর্তনের ধারায় পাওয়া’।

 

জীবাশ্ম গবেষণা শেষে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৫ লাখ বছর আগেকার হোমো হাইডেলবার্গেনসিস প্রজাতির মুখের সঙ্গে আধুনিক মানব ও সমসাময়িক হোমো নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেকার কিছুটা অন্তর্বর্তী মিল ছিল, যেটি দীর্ঘ সময় ধরে মোটামুটি বড় আকারের ছিল’।  

তিনি যুক্তি দেন যে, এই হাইডেলবার্গেনসিসরা নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিল।

মানব শিশুদের অসাধারণ ভাবপূর্ণ মুখ থেকে বের হওয়া শ্বাস-প্রশ্বাসও সব জীবন্ত হয়। আমাদের চোখ ও মুখ চারপাশের মাংসপেশীর মধ্যেকার সূক্ষ্ম বদলের মাধ্যমে আবেগ ও তথ্যের বিপুল পরিসীমা বহন করে।  

অন্য প্রাণীদেরও একটি ভাবপূর্ণ মুখ রয়েছে। আর আমাদের প্রত্যেকে একে অন্যের মুখের দিকে এক নজরে নিজ প্রজাতির আরেক সদস্যকে শনাক্ত করতে পারে। এমনকি অনেকটা মানুষের মতো প্রজাতি আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেলেও চিহ্নিত করতে পারি আমরা। যদিও তাদেরও আমাদের মতোই সমতল মুখ, উচ্চ কপাল, ছোট চোয়াল এবং চিবুক ভাগ হয়ে গেছে।  
তাই প্রশ্ন উঠছে, আমরা কি আজকের মতো চেহারা দিয়ে প্রজাতির জীবন শুরু করিনি? মানুষের মতো দেখতে মুখমণ্ডলধারী প্রাণীদের মুখও কি ‘আধুনিক’ নয়? পুরনোদের তুলনায় তারাও কি আমাদের মতোই স্বাতন্ত্র্যসূচক মুখের বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে?

এসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক কৌশল এবং আবিষ্কার।  
সংগৃহীত ছবিগবেষণা বলছে, বানর, শিম্পাঞ্জি থেকে শুরু করে আমাদের হোমিনিন আত্মীয়দের সবাই গত ১০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে বসবাস করে আসছে।  

এদের মধ্যে ৪০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত নিয়ান্ডারথালদের বিরাট নাক সম্বলিত বিশাল মুখ ছিল। মুখের সামনের দিকটা এগিয়ে টানা, মস্তকও প্রায় বদলে গিয়ে দাবানো ও বাইরের দিকটা বাঁকা ছিল।  

অন্যদিকে সাড়ে আট লাখ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া হাইডেলবার্গেনসিসদের নিয়ান্ডারথালদের চেয়ে সামান্য চাপানো মুখ, একটি ছোট নাক ও আরো সুস্পষ্ট ললাট-সেতুবন্ধ ছিল।  

১৯২০ সালে জাম্বিয়ার পর্বতমালায় পাওয়া হাইডেলবার্গেনসিস প্রজাতির ভাঙা খুলির জীবাশ্ম নিয়ে কয়েক দশকের গবেষণায় সর্বাধিক নৃ-বিজ্ঞানী একমত যে, নিয়ান্ডারথালদের শরীরে হাইডেলবার্গেনসিস থেকে এসব বৈশিষ্ট্য অনেকাংশে বজায় ছিল। তবে তারা আরও প্রসূত, অভিক্ষিপ্ত ও উন্নত চোয়াল পেয়েছিল।  

আর আমাদের আধুনিক মানুষের ছোট নাক মুখের মধ্যে মস্তকের নিচের এলাকায় রয়েছে। আমাদের গালের হাড় কৌণিক হয় এবং প্রতিটি গাল অক্ষিকোটরের তলদেশে একটি স্বতন্ত্র অবস্থানে বিদ্যমান। আমাদের চোখ অন্য দুই প্রজাতির একটি অনুরূপ দমকা চেহারা পেয়েছে, যখন তাদের দূর জপানো চোখ ও কপাল-সেতুবন্ধ মুখের বাকি অংশের ওপরে এসে পড়েছিল এবং একজোড়া মিলিত অক্ষিকোটর ছিল।

এসব বিবেচনায় হাইডেলবার্গেনসিস প্রজাতিকে আধুনিক মানুষ ও আমাদের বিলুপ্ত সহোদর নিয়ান্ডারথালদের সাধারণ পূর্বপুরুষ বলে চিহ্নিত করেন বিজ্ঞানীরা।  

১৯৯৭ সালে উত্তর স্পেনের সিয়েরা দে আতাপুরেকা অঞ্চলের মাটি খুঁড়ে অন্য একটি মানব প্রজাতির জীবাশ্ম আবিষ্কারের পর ধারণা করা হয় যে, এটি পরে হাইডেলবার্গেনসিসে রূপ পরিগ্রহ করে।

একটি পর্বতের সিঙ্কহোলের মধ্যে একটি ছোট, সমতল মুখবিশিষ্ট খুলির টুকরার পাশাপাশি কিছু অন্যান্য হাড় আবিষ্কৃত হয় সেবার। এ দেহাবশেষ একটি অজানা হোমিনিন প্রজাতির বলে চিহ্নিত করে এর নামকরণ করা হয় হোমো অ্যান্টেসেসর।  

‘সাড়ে আট লাখ বছর আগে বাস করা মানুষের পূর্বপুরুষ এই নতুন প্রজাতির মুখও আমাদের মতো ছিল অনেকটা। ‌এর অর্থ এটাই যে, আমাদের মুখ হোমো হাইডেলবার্গেনসিস ও নিয়ান্ডারথালদের তুলনায় আসলে বেশ আদিম’- বলেন স্ট্রিংগার।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।