ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

প্রায় অদৃশ্য হতে পারে সামুদ্রিক প্রাণীগুলো

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
প্রায় অদৃশ্য হতে পারে সামুদ্রিক প্রাণীগুলো অক্টোপাসেরা রঞ্জক কোষের ব্যবহারে প্রায় অদৃশ্য হয়ে শিকারিদের ফাঁকি দেয়। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

সামুদ্রিক গ্লাস (কাঁচ) স্কুইড ও গ্লাস অক্টোপাসেরা তাদের শরীরের মেলানিনের মতো রঞ্জক কোষের ব্যবহারে প্রায় অদৃশ্য হয়ে শিকারিদের ফাঁকি দেয়।

জ্যাপেটেলা ব্যাংকি স্কুইড ও অনকোটাইটিস অক্টোপাস স্বচ্ছ থেকে লালচে বাদামী রঙে গিয়েও অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। এ দু’টি ভিন্ন প্রজাতি একীভূত হয়েও শিকারিদের ফাঁকি দেয়, যাকে বলে হাইপারিড প্রক্রিয়া।

সম্পূর্ণ স্বচ্ছ পিপা আকৃতির প্রাণী সামুদ্রিক সাল্পও হাইপারিড প্রক্রিয়ায় নিজেদেরকে ক্লোন ও একীভূত করে।

প্রায় পুরোপুরি স্বচ্ছ গভীর সমুদ্রের কীট টমোপার্টারিস বা সমজাতীয় প্ল্যাঙ্কটনীয় পোলিশাইটেরাও নিজেদেরকে শিকারিদের কাছে দৃশ্যমান করাকে খুব কঠিন করে তোলে।

আর সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি অঞ্চলের বাসিন্দাদের রয়েছে জোনাকি বা সামুদ্রিক মাছের মতো আলোর জৈব রাসায়নিক নির্গমণ প্রক্রিয়ায় নিজেদেরকে হালকা চকচকে হিসেবে প্রদর্শনের ক্ষমতা।

 হাইপারিড বা একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেদের রক্ষা করে কিছু প্রাণী।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতক্রপট্যানিয়ান গোত্রের সাগর সিল বা স্যাফিফায়ারসের (স্যাপফিরিনা) বিভিন্ন প্রজাতিও উজ্জ্বল নীল থেকে লাল ও সোনালী পর্যন্ত বিস্তৃত প্রফুল্ল রং ছড়িয়ে দেয়। পিপড়া আকারের এ প্রাণীরা এক সেকেন্ডেই উজ্জ্বলতা ও প্রায় অদৃশ্য অবস্থা তৈরি করতে পারে, যা চকমকে ও চিত্তাকর্ষক হয়।

এসব প্রাণীর অদৃশ্য হয়ে থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে স্বচ্ছতা। টিকে থাকতে স্বচ্ছতার ক্ষমতা অর্জনে কোনো কোনো প্রাণীকে এমনকি একাধিকবার বিবর্তিতও হতে হয়েছে।

গ্লাস অক্টোপাস (ভিট্রেলেডেনেলা রিস্টার্ডি) তার জেলির মতো নরম-আঠালো শরীরকে প্রয়োজনে ৪৫ সেন্টিমিটার (১৮ ইঞ্চি) পর্যন্ত প্রসারিত করে। বিপদে পড়লে বা আশঙ্কায় এটি পরিপাকতন্ত্র এবং চোখ ও এর অপটিক স্নায়ু ছাড়া সম্পূর্ণ শরীরটিকে শত্রুদের কাছে প্রায় অদৃশ্য করে ফেলে।

এক্ষেত্রে এটি শিকারিদের চোখে খুব প্রবলভাবে পড়ার সম্ভাবনায় থাকা তার পেরিফেরিয়াল দৃষ্টিকে হ্রাস করে। কিন্তু শরীরকে এমনভাবে সাজায় যেন, ছায়াটিকে ছোট করা যায়। ফলে নিজেরা শিকারিদের শনাক্ত করতে পারলেও শিকারিরা তাদেরকে দেখতে পায় না।

গ্লাস অক্টোপাসের এই চোখের ছদ্মবেশ অবশ্য ক্র্যানচাইয়েডে বা কাচের স্কুইডের মধ্যে দেখা যায় না। বরং, শরীর সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হলেও তাদের বড় অস্বচ্ছ চোখ এক্ষেত্রে সমস্যার কারণ। শিকারি সহজেই ছায়া দেখে তার ওপর অস্ত্র নিক্ষেপে সমর্থ হন।

গ্লাস স্কুইড পরিবারের প্রায় ৬০টি প্রজাতি ছদ্মবেশ ধারণে নিজেদের ফোটোফারেসের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া ব্যবহার করে চোখের নিচে পাল্টা আলোকসজ্জা গড়ে তোলে এরা।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, স্কুইডের ফোটোফারগুলো অলৌকিকভাবে অদৃশ্যতা তৈরি করে, যা প্রতিটি দিক থেকে আসছে এমন আলোর পরিমাণের সঙ্গে মিলে যায়। ফলে শিকারিদের কাছে তাদেরকে সম্পূর্ণ অদৃশ্য করে তোলে।

টমপোর্টারিসের কমপক্ষে ১১টি প্রজাতিও উজ্জ্বল আলোকিত রংগুলো নির্গত করতে পারে। তারা নীলকে উজ্জ্বল করে তোলে। শুধু একটি প্রজাতি, টমোপার্টারিস নিসেনি হলুদ আলো উৎপন্ন করতে পারে।

কিছু টমোপার্টারিস কীট এমনকি তাদের শরীরের একটি উজ্জ্বল অংশ বিমুক্ত দিয়ে শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে পারে, যা প্যারাপডিয়া নামে পরিচিত। এর ফলে শিকারি বিকৃত শরীরের ওই অংশটিকে ধাওয়া করে।

সাগর সিলের ত্বকের ক্ষুদ্র কোষের রয়েছে নানা রং তৈরির ক্ষমতা, যা বিভ্রান্ত করে শত্রুদের।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত কিছুটা জেলিফিশের মতো দেখতে সামুদ্রিক শাল্প নিজেদের ক্লোন, দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রিং এবং সংযুক্ত অঙ্গগুলোর অন্যান্য আকৃতি গঠন করে। তারা বৈদ্যুতিক সংকেতগুলোর মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে একীভূত হয়ে শিকারিদের কাছ থেকে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে সক্ষম।

এ হাইপারিড প্রক্রিয়ায় প্রাণীগুলো এক ধরনের ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে, যেটিতে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে ও আলোয় মোড় নেয়, নিজেদের ক্লোন করে এবং প্রায় অদৃশ্যভাবে পারস্পরিক যোগাযোগ করতে পারে। তারা একটি প্রজাতির পা ছোট আকারের চুলের মতো প্রোউবারেন্সগুলোতে ঢেকে রেখেছিল।

জ্যাপেটেলা অক্টোপাস ও অনাইকাটোথিস ব্যাংকি স্কুইড নিজেদেরকে একীভূত করতে সক্ষম। কেননা,  উভয় প্রজাতির চামড়ার হালকা সংবেদনশীল ক্রোমাটোফারস কোষগুলোর ছোপ রয়েছে। যখন তারা আলো শনাক্ত করে, তখন তারা দ্রুত রঞ্জকটিকে প্রসারিত ও মুক্ত করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।