ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

ছিটমহলে-ঘরে বিভক্ত নেদারল্যান্ড-বেলজিয়াম!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৭
ছিটমহলে-ঘরে বিভক্ত নেদারল্যান্ড-বেলজিয়াম!  দেশ দু’টির বেশিরভাগ ভবন, এমনকি ঘরও সীমান্তে অর্ধেক বিভক্ত। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বাংলাদেশ-ভারতের বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিকত্বের পরিচয়হীন বাসিন্দারা দীর্ঘ ছয় দশকের মানবেতর জীবনযাপনের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত-স্বাধীন হয়েছেন মাত্র কয়েক বছর আগে।

তবে নেদারল্যান্ড ও বেলজিয়ামের সীমান্তে থাকা দুই দেশের অর্ধশতাধিক ছিটমহলের বাসিন্দাদের কোনো দুর্ভোগই নেই। বরং, এক দেশের ভেতরে থাকা অন্য দেশের ছিটমহল ও তার ভেতরে থাকা দেশটিরই ছিটমহলের একজন ব্যক্তি তার বিছানায় থেকেই বিভিন্ন দেশে ঘুমান।

এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে মানুষ অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য তাদের ঘরের সামনের দরজাও অন্য দেশের মধ্যে সম্প্রসারিত করতে পারেন।

ডাচ পৌরসভা বার্লি-নাসাওয়ের ভেতরে প্রায় ৩০টি বেলজিয়ান ছিটমহলের অবস্থান, যার ভেতরে আবার ২০টির বেশি ডাচ ছিটমহলও রয়েছে। বেলজিয়ান সীমান্তের অদূরে  সেদেশের ছিটমহলগুলো যৌথভাবে বার্লি-হর্টোগ নামে পরিচিত।

মানচিত্রে ছিটমহলগুলো অ্যামিবার মতো দেখতে, যার মূল অংশ নেদারল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলের ভেতরে। সবচেয়ে বিষ্ময়কর যে, বার্লি-নাসাও ও বার্লি-হর্টোগের বেশিরভাগ ভবন সীমান্তে অর্ধেক বিভক্ত। অর্থাৎ, একই ভবনের কিছু ঘর বেলজিয়ামের আর কিছু ঘর নেদারল্যান্ডের। কিছু ঘরতো দুই দেশ রীতিমতো ভাগাভাগি করে ভোগদখল করছে!

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ত সীমান্ত প্রকৃতপক্ষে ১৯৯৫ সাল পর্যন্তও চূড়ান্ত হয়নি।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত তাই শুধু ছিটমহলেই নয়, ভবনে-ঘরেও বিভক্ত প্রতিবেশী দেশ দু’টি!  

নেদারল্যান্ড উত্তর ইউরোপের একটি শান্ত রাষ্ট্র, তবে ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা রয়েছে। এখানকার অনেক ভবনের মাধ্যমেই বেলজিয়ামের আন্তর্জাতিক সীমানা আছে। মধ্যযুগে স্থানীয় অনুন্নত পরিবারগুলোর মাঝে ভূমির অংশ ভাগের সময়ই এ সমস্যার উদ্ভব। বার্লি-হর্টোগ ওই সময় ব্রুবান্টের ডিউকের আর বার্লি-নাসাউ হাউস অব নাসাউর সম্পত্তি ছিল।

বেলজিয়াম ১৮৩১ সালে যখন নেদারল্যান্ড থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তখন দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে জটিল এ এলাকাগুলো সঠিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা নির্ধারণে বিরত থাকে। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এ সীমান্তগুলো চূড়ান্তই হয়নি।

বেলজিয়ামের পক্ষে তার কোনো অবশিষ্টাংশের মধ্যে থাকা বাকি অবশিষ্টাংশ অঞ্চলগুলোকে পৃথক করাও সহজ ছিল না। কারণ, লাল ইটের যে ভবনগুলো দেশটির সীমানা চিহ্নিত করবে, সেগুলো ছোট ডাচ শহর থেকে আলাদা নয়। এ অঞ্চলের প্রায় ৯ হাজার বাসিন্দার তিন চতুর্থাংশ ডাচ পাসপোর্টধারী এবং ভূমির বৃহৎ অংশও ডাচ পৌরসভার অন্তর্গত।

এমনকি বার্লি-নাসাউ ও বার্লি-হর্টোগের অনেক অধিবাসীর দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং বেলজিয়ান ও ডাচ উভয় দেশেরই পাসপোর্ট রয়েছে। যেমন, বার্লি পর্যটন দফতরের চেয়ারম্যান উইলম ভ্যান গৌল ডাচ পাসপোর্টধারী হলেও তার মা বেলজিয়ান।

১৯৯৫ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যস্ততায় ও পরামর্শদাতাদের আগ্রহে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে দু'দেশ- যেন দু’টি ভিন্ন সম্প্রদায় একসঙ্গে সুসংহতভাবে বসবাস করতে পারেন।

সীমানাগুলো একপাশে ‘এনএল’ (নিউজিল্যান্ড) দ্বারা ও অন্যপাশে 'বি' (বেলজিয়াম) দিয়ে চিহ্নিত।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতএখন তাই ছিটমহলগুলোকে একপাশে ‘এনএল’ দিয়ে নিউজিল্যান্ডের ও অন্যপাশে ‘বি’ দিয়ে বেলজিয়ামের সীমানা, এমনকি ভবন ও ঘরগুলোকেও স্ব স্ব দেশের পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ডাচ সীমানা বেলজিয়ানের তুলনায় বেশি গোছালো। ডাচ ছিটমহলের গাছগুলোও চুনের রেখায় চিহ্নিত।

তবে, ছিটমহলগুলো প্রায়ই নানা জটিলতা তৈরি করে দুই দেশের মাঝে। যেমন, বেলজিয়ান পৌরসভার মেয়র লিও ভ্যান তিলবার্গের টাউন হল সীমানা দিয়ে বিভক্ত। এ অবস্থানের কারণে বেলজিয়ামকে মেয়র ভবনের অংশ তৈরি করতে নেদারল্যান্ডের অনুমতি চাইতে হয়েছিল।

সীমান্তের শীর্ষে নির্মিত একটি ডাচ ব্যাংক জটিলতার নিকৃষ্টতম উদাহরণ। জাতীয় ট্যাক্স পরিদর্শকরা ব্যাংকটিতে এলে কাগজপত্র ভবনের এক অংশ থেকে অন্য অংশে সরানো হয়।

তবে আলোচনার মাধ্যমে ট্রান্স সীমান্ত সহযোগিতায় কিছু অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা,  ডিসেম্বর ১২, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।