ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

শিশু ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে রাস্তায়

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৮
শিশু ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে রাস্তায় ইঞ্জিনিয়ার আশিষ শর্মা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ভাবতে পারেন গল্প কিন্তু এটাই সত্য যে, পথশিশুদের ভিক্ষা থেকে সরিয়ে আনতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক যুবক। ২৯ বছর বয়সী ওই ইঞ্জিনিয়ার আশিষ শর্মা শিশু ভিক্ষাবৃত্তিতে সচেতনতা বাড়াতে হেঁটে হেঁটে এ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতজুড়ে। উদীয়মান এই তরুণ এখন দিল্লিতে অসহায় শিশুদের হয়ে কাজ করছেন।

এর আগে একদিন কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটি শিশুকে রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখতে পেয়েছিলেন আশিষ। ওই শিশুটি অপুষ্টিতে ভুগছিল এবং তার হাত থেকে রক্তপাত দেখতে পান তিনি।

পরে এ আহত শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে প্রথমে তাকে খাবার দেন এবং পরে তার জন্য কিছু কাপড়ের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া শিশুটিকে পাশের একটি স্কুলেও ভর্তি করে দেন দক্ষ ওই ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু না, এটুকু করে এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। পরে সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে এসব শিশুদের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার। তবে হ্যা, এটাকে বাস্তব গল্প বলা যেতেই পারে।

আশিষ একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সে সময়ে ২০১৫ সালে দিল্লির রোহিণীতে ওই আহত ও অপুষ্টিজনিত ভিক্ষুক শিশুটির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এতেই তার জীবন পাল্টে যায় বলে উল্লেখ করেছেন আশিষ নিজেই।

‘আমি ওই শিশুটিকে স্কুলে ভর্তি করালাম এবং তার খরচের দায়িত্ব নিই। তারপরও আমি থেমে থাকতে পারিনি। এই ধরনের অস্তিত্বের মধ্যে আটকে থাকা অন্য শিশুদের চিন্তায় আমার ঘুম হয়নি। পরে আমি এসব শিশুদের পাশে দাঁড়াতে রাস্তায় নেমে পড়ি। এখনও রাস্তায় রাস্তায় এ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি আমি’ স্থানীয় সময় বুধবার (০৮ জুন) সন্ধ্যায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছে এসব কথা বলেন আশিষ।

এই তরুণ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ২০১৫ সালে বড়দিন উৎসবে শিশু ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনে আমি চাকরি ছেড়ে দিই। পরে অনেকদিন গবেষণা করে পরিকল্পনা নিই কিভাবে শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারি। শেষপর্যন্ত বুঝতে পারি শিশুদের এমন খারাপ অবস্থার জন্য দায়ী হলো তারা বা তাদের পরিবারই। কেননা সচেতনতার অভাবে তারা দেশের সরকারি বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচির কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে না। এরপর আমি তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ি।

২০১৭ সালের ২২ আগস্ট আমি জম্মুতে (ভারতের একটি রাজ্য) ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূল পদযাত্রা শুরু করি। আমি জানতাম পায়ে হেঁটে এ অভিযান সহজ হবে না। তারপরও ভারতকে একটি ভিক্ষাবৃত্তি মুক্ত জাতি বানাতে আমি কঠিন এ মিশনটি হাতে নিয়েছি, বলেন এই যুবক।

আশিষ এও বলেন, প্রথমে আমি আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। তারা এ বিষয়টি শুনে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আমার বাবা সুরেশ শর্মা কৃষি বিভাগে কাজ করছেন এবং মা গৃহিনী। এ মিশনে তাদের কাছ থেকে দৃঢ় সমর্থন পেয়ে আমি অনেক আনন্দিত।

তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করছি। আর হাজার হাজার মানুষকে তাদের কল্যাণমূলক পরিকল্পনার ব্যাপারে সচেতন করি। যাতে তাদের ব্যক্তিগত জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি। আমি এ পর্যন্ত পাঁচটি রাজ্যের ৫৪টি জেলায় ৬২৫ কিলোমিটার হেঁটেছি। এসময় আমি পাঁচটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছি এবং ভারতে ভিক্ষাবৃত্তি মুক্ত করার প্রস্তবটি তাদের কাছে তুলে ধরেছি।

বুধবার সন্ধ্যায় আশিষ রাজধানীতে বেশ কয়েকজন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেন। পরে তার সঙ্গে দুই কিলোমিটার পথ হাঁটার জন্য আশপাশের যুবকদের আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৮
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।