রাজনৈতিক জনসমাবেশ করার জন্য বহু আগেই ঢাকা শহরের কোনো একটি নির্দিষ্ট মাঠ বা স্থান বেছে নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তে আসা উচিত ছিল। শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এমনটি বলেছেন।
কিন্তু সেটা রাস্তাজুড়ে কেন হবে একটি মাঠ এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজন করার জন্য নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। এক সাক্ষাৎকারে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এমন স্থানে জনসভা করতে হবে যেখানে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হবে না। যেখানে-সেখানে দেয়াল নষ্ট করে অকারণে পোস্টারও লাগানো যাবে না। জনসমাবেশ হলে যে প্রাণহানি হয়, তার দায়ই বা কে নেবে! আমার প্রস্তাব- এখন দলগুলোর ডিজিটালি জনসভা করা উচিত। যে দাবিগুলো রাজনৈতিক দলগুলো জানাবে তা ডিজিটাল মাধ্যমেই জানাক। এতে জনভোগান্তি কমবে, নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার হতে হবে না, অকারণে রাস্তায় লাশও পড়বে না। এই শিক্ষাবিদ বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং এর আশপাশের কিছু জায়গায় পাকিস্তান আমল থেকেই জনসমাবেশ হয়ে আসছে। এর কারণ হচ্ছে প্রেস ক্লাব থেকে সাংবাদিকরা জনসমাবেশে দ্রুত যাওয়া-আসা করতে পারেন। আর এ সংক্রান্ত খবরও তখন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একটা সময় ছিল ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো কিছু হলে তার তেমন কোনো প্রভাব অন্য কোথাও পড়ত না। কিন্তু এখন ঢাকা শহর ঘিঞ্জি হয়ে গেছে। রাস্তাগুলোতে এখন এত ভিড় থাকে যে, কোনো কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে তখন পুরো ঢাকা শহরে তার ধকল চলতে থাকে। এতে মানুষের কর্মঘণ্টাসহ সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতির যে অপচয় হয়, সে বিষয়ে আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই লেখালেখি করতাম। এখন আর লিখি না। তিনি বলেন, এবার দেখলাম যে বিএনপির সমাবেশের জন্য কমলাপুর স্টেডিয়ামের নামটি এসেছে। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের জন্য কমলাপুর স্টেডিয়ামকেই বেছে নেওয়া যেতে পারে।
কারণ সেখানে যানজটের সমস্যা নেই। আশপাশে অনেকগুলো রাস্তা আছে। যেহেতু কমলাপুর স্টেডিয়ামে এখন সেভাবে খেলাধুলা হয় না। মাঝেমধ্যে মেয়েরা খেলে। আর সমাবেশ তো প্রতিদিন হবে না। যেদিন খেলা হবে না সেদিন এ ধরনের আয়োজন করা যেতে পারে। আবার যে কোনো খেলার আগেই তা শেষ করতে হবে। যে দল তাদের আয়োজনের জন্য স্টেডিয়ামটি ব্যবহার করবে তারাই তা পরিষ্কার করে একে ব্যবহার উপযোগী করে দিয়ে যাবে। কারণ যে কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ হওয়া মানেই সেখানে বিভিন্ন কাগজ ও প্যাকেটসহ নানা রকমের আবর্জনা জমা হবে। যে দল এই আবর্জনা রেখে চলে যাবে তাদের পরবর্তীতে আর কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এমনটি করা গেলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও দলের কর্মসূচির মধ্যে পড়ে যাবে। এবারই প্রথম দেখলাম কমলাপুর স্টেডিয়ামের নাম এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজনের জন্য প্রস্তাব হিসেবে এসেছে। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসমাবেশের জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ এটা জনসাধারণের একটি পার্ক। এখানে গাছপালা আছে। মানুষ শরীরচর্চা করে, ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে। এ ছাড়া এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত। এ কারণে এ স্থানটি জনসমাবেশ করার জন্য ভালো নয়।
এই কথাসাহিত্যিক বলেন, কমলাপুর স্টেডিয়াম ছাড়া বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের পেছনে যে মাঠ রয়েছে তা আরও বড় করে একে বিভিন্ন দলের জনসমাবেশস্থল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেখানে হলে খুব ক্ষতি হবে না, কারণ এর পাশে বড় বড় রাস্তা আছে। সেখানে একটি রাস্তা বন্ধ হলে কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ তার পাশে আরও রাস্তা আছে। আগে যখন এই মাঠে বাণিজ্য মেলা হতো তখন মাসব্যাপী সেখানে যানজট লেগেই থাকত। কিন্তু এরপরও যে সেখানে শহরের বিশাল কোনো ক্ষতি হতো এমন না।
মনজুরুল ইসলাম বলেন, এখন ফেসবুক ও টেলিভিশনের সময়ে এসে কেনইবা দলগুলোর মাঠে জনসমাবেশ করতে হবে! জনসমাবেশে দলগুলোর নেতারা কথা শোনাবেন। তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোনালেই হয়। দেশের মানুষ বাসায় বসে তা শুনতে পারেন। রাস্তা বা মাঠে-ময়দানে জনসভা পরিত্যাগ করতে হবে। একই সঙ্গে শহরের কোনো জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলো পোস্টার লাগাতে পারবে না- এমন প্রস্তাবও আসা উচিত। ডিজিটাল বোর্ড তৈরি করে সেখানে বছরব্যাপী দলগুলো পোস্টার দিক। আমরা একবিংশ শতাব্দীতে আছি, পুরো পৃথিবী কোন দিকে যাচ্ছে তা দেখতে হবে। উন্নয়ন করলেই চলবে না, রাজনৈতিক আচরণেও উন্নয়ন দরকার।
সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন