মিনার মাহমুদ, মৃত্যুর পর আরো বেশি করে চেনা এবং জানা এক মানুষ। তাকে নিয়ে লিখতে হবে এ চিন্তা কখনও ছিল না।
একটি বাংলাদেশ, একটি মানচিত্র ও একটি পতাকার ভেতরে তৈরি হয়েছিল সুন্দর স্বপ্ন। এ স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। স্বপ্ন যাত্রার ৪১ বছর পর মিনার মাহমুদ তার প্রস্থানের জন্য দায়ী করে গেলেন ‘বাংলাদেশের সার্বিক সমাজ ব্যবস্থা’কে।
একজন মিনার মাহমুদকে আমার চেনা আশির দশকের সাপ্তাহিক বিচিন্তার সম্পাদক হিসেবে। এরপর জেল-হুলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা এবং স্বদেশে ফেরা। তারপর আর কিছুই জানতাম না। এমনকি ২৯ মার্চের আগ পর্যন্ত। বাংলাদেশের মফস্বল শহর কক্সবাজারে বসে রাজধানী ঢাকার মিনার মাহমুদ কোথায় ছিলেন, কেমন ছিলেন তা জানা যায়নি। জানার ইচ্ছাও ছিল না।
কিন্তু ২৯ মার্চ চিরপ্রস্থানের পর থেকে আবারো নতুন করে মিনার মাহমুদ পরিচিত হতে থাকে। ১০ এপ্রিল তার লেখা শেষ চিঠিটি বাংলানিউজে প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত এ কৌতূহল আমার মধ্যে ছিল। কিন্তু মিনারের শেষ চিঠি পাঠ করে আমি আর মিনারকে জানতে চাই না। আমি নিজের প্রতি এক বুক ঘৃণা, অপমান উৎসর্গ করি।
তিনি নিজকে খুন করার আয়োজন শেষ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের স্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলেছেন ‘নিজেকে খুন করে ফেলার এ আয়োজনের সবচেয়ে প্রতিবন্ধকতা ছিলে তুমি। আমার মৃতদেহের ওপর আছড়ে পড়ে তোমার কান্না--ভাবতেই সিদ্বান্ত পরিবর্তন করি। আবার সিদ্বান্ত নেই। লাজুক তুমি এখন নিঃসঙ্গ, একাকী। তোমার মনে প্রথম প্রশ্ন আসবে আমি কেন আত্মহত্যা করলাম? গতকাল দৈনিক আজকের প্রত্যাশা থেকে রিজাইন করেছি বলে? মোটেও না, আসলে নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। কারও প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ আছে আমার বাংলাদেশের সার্বিক সমাজ ব্যবস্থায়। ’
শেষ চিঠির ভেতরে মিনার তার পুরো জীবনের সংক্ষিপ্ত অধ্যায় তুলে ধরেছেন। লেখাপড়া, সাংবাদিকতা, যুক্তরাষ্ট্রের জীবন, স্বদেশ ফেরা, বিয়ে, হতাশা সবটুকুই পাঠকরা সহজেই বুঝে নেবেন।
আর এ চিঠি আমাদের ভুলের সব শাখা-প্রশাখা চিহ্নিত করে দিয়েছে। একজন মিনার মাহমুদ বলেছেন, বিচিন্তার সফল যাত্রা, জেল জীবন, বেকার জীবন, গণতান্ত্রিক সরকারের নামে ভণ্ডামি, বিকৃত মানসিকতার মানুষের চিন্তা, সাংবাদিকতা পেশার নাজুকতা।
তিনিও বাঁচাতে চেয়েছিলেন। একটি চাকরির জন্য চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তৈরি ছিলেন হাজিরা দেওয়ার জন্য, নিয়মিত লেখার জন্য। বিনিময় মাস শেষে একটা বেতন প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু মিনারকে তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। মিনার প্রস্থান করেছেন।
আর এ প্রস্থানের পরও কি একই ভুল। একই বাংলাদেশ। একই সমাজ ব্যবস্থা কামনা করা যায়?
লেখক: জেলা প্রতিনিধি, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, কক্সবাজার
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১২
সম্পাদনা: নজরুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর/রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর