সর্বত্রই সমালোচনায় মুখর সেন বাবু অবশেষে নজিরবিহীন `ঐতিহাসিক’ পদত্যাগ করলেন। সেজন্য তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ক’মাস আগেও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন কিংবা ডাক ও টেলিমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু বা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত অথবা বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত-সমালোচিত হন। সড়ক দুর্ঘটনা, হত্যা, শেয়ারবাজার কেলেংকারি, উল্টাপাল্টা বক্তব্যের কারণে তাদের পদত্যাগের প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু তারা তা করেননি। আবুল-রাজু-ফারুককে ছাড়িয়ে গেলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বিদেশ থেকে ডেকে এনে গত বছরের ২৮ নভেম্বর রেলমন্ত্রী বানিয়ে ছিলেন এবং এবার প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে ফিরে গত ১৫ এপ্রিল রাতে পদত্যাগের নির্দেশ দিলেন। যা দল এবং সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও রক্ষা করবে। সরকারি দলের এই মাইনাসের বিপরীতে বিরোধী দল প্লাস পয়েন্ট অর্জন করলো।
আমি ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বন ও পরিবেশমন্ত্রী সাজেদা চৌধুরীর প্রটোকল কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি। তখন স্বচক্ষে দেখেছি, মন্ত্রীর অজান্তে তার ড্রাইভার, সিকউরিটি, পিএ, এপিএসরা কী করে। যা মন্ত্রী বলতেও পারবেন না। হয়তো সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যদিও তিনি বলেছেন- গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং সব ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে আমি রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলাম।
তার বক্তব্যগুলো তুলে ধরে যৎসামান্য পর্যালোচনা করতে চাই। তিনি বলেছেন:
১. গত ৯ এপ্রিলের ঘটনায় যেহেতু রেলওয়ের লোকজন যুক্ত তাই স্বাভাবিকভাবে দায়টা রেলওয়ের ওপর বর্তায়।
২. আমি কারো বোঝা হতে চাই না। দল, সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর দায় হতে চাই না। গণতন্ত্র রক্ষায় আমি এ সাহসী সিদ্ধান্ত নিলাম। ৪০ বছরে যে দৃষ্টান্ত নেই, সে দৃষ্টান্ত আমি স্থাপন করলাম। গণতন্ত্রের মাত্রাকে আমি প্রসারিত করলাম।
৩. বিষ খেয়ে আমি নীলকণ্ঠ হতে চাই।
৪. তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসবো।
৫. আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বিচারবুদ্ধি ও স্বভাবসিদ্ধ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
৬. গণতন্ত্রের সুবিধাটুকুই সবাই নেয়। কিন্তু দায়িত্ব কেউ নেয় না। আমি দায়িত্ব নিলাম।
৭. ওই ঘটনায় আমার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সুরঞ্জিত বাবু তুখোড় বক্তা, তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান। তার সঙ্গে কয়েক বছর আগে টরন্টোতে শক্তি দেবের বাসায় নাস্তার টেবিলে তার জমানো আড্ডায় আমি ছিলাম মুগ্ধ শ্রোতা। তার সেই হাসিমাখা মুখটি দেখলাম বিষন্নতায় ভরা। যদিও তিনি স্বভাবসুলভ ব্যক্তিত্ত্বে স্বাভাবিক থাকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। কারণ এই ঘটনা তার পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যদিও তিনি এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সবকিছুর দায়ভার’ নিজে নিয়ে, ‘গণতন্ত্রের মাত্রাকে প্রসারিত’ করার লক্ষ্যে, ‘তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত’ হবেন প্রত্যাশায় বিষ পান করে ``নীলকন্ঠ`` হতে চাইলেন! ‘রেলের কালো বেড়াল’ তাড়াতে গিয়ে তার গলায়ই ঘণ্টা পড়লো।
এনটিভির এক টক শোতে দেখলাম মহিউদ্দিন খান আলমগীর নানাভাবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পক্ষে ওকালতি করছেন। সেটা করতে গিয়ে তিনি তুলে ধরছিলেন সাবেক রেল ও যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার কুকীর্তি আর দুর্নীতির কথা। আমাদের নেতা ও রাজনীতিকদের এই প্রবণতা খুবই দুঃখজনক।
পুনশ্চ: উচ্চ মহল ভেবে দেখবেন, মন্ত্রীদের এপিএস বা ব্যক্তিগত সহকারীর দরকার আছে কিনা। সাধারণত এই পদগুলো রাজনৈতিক পদ এবং এসব পদে মন্ত্রীদের পছন্দের লোকেরাই নিয়োগ পেয়ে থাকেন। দেখা গেছে, ভূমিমন্ত্রী তার পুত্রকেই এপিএস বানিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
saifullahdulal@gmail.com
বাংলাদেশ সময় : ০৯৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১২
সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিট্যান্ট আউটপুট এডিটর;
জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।