একটি সূত্রের দাবি, মিসেস ইলিয়াসকে ফোন, র্যাব-পুলিশকে নিয়ে পুবাইল অভিযান--সবকিছুই ছিল পরিকল্পিত! এর মাধ্যমে ইলিয়াস অপহরণকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিল পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের একটি চেষ্টা হয়েছিল! কিন্তু রাজনৈতিক দরকষাকষিতে থমকে যায় সে চেষ্টা! যে কোনো শর্তে স্বামীকে ফেরত চেয়েছিলেন মিসেস ইলিয়াস তথা তাহসিনা রুশদি লুনা। তার কাছেতো স্বামী, তাদের সন্তানদের পিতাই বড়।
এর আগে আমাকে বলা হয়েছিল ইলিয়াসকে অপহরণের পেছনে সরকার, পুলিশ-র্যাব এরা কোনোভাবেই জড়িত না। একটি সংস্থার যে অংশটি একাজ করেছে তা সরকার আগে জানতো না। কিন্তু দায়দায়িত্বের পুরোটা খুব স্বাভাবিকভাবে সরকারের কাঁধেই গিয়ে পড়েছে। কারা ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে এটি জানা সত্ত্বেও ভাসুরের-নাম-মুখে-নেয়া-যায়-না’র মতো সংশ্লিষ্ট সংস্থাটিকে এড়িয়ে খালেদা জিয়া তার নিজের হাতে সৃষ্ট র্যাবকে দোষারোপ করলে অনেকেই অবাক হন। বিরোধীদলীয় নেত্রী দোষ তাদের ঘাড়ে দেয়াতে র্যাবও এই উদ্ধার অভিযান নিয়ে বিশেষ তৎপর হয়। কিন্তু তাদের হাতও তো ওই পর্যায় পর্যন্ত লম্বা না!
সূত্রগুলোর মতে বিশেষ সংস্থাটির নাম জানার পর এ ব্যাপারে সরকারি দলের নেতারাও আতংকিত হয়েছেন। তাদের গণতান্ত্রিক সরকারকে বিপদগ্রস্ত করতে সংস্থাটির সক্রিয়তা দেখে তারা আতংকিত। এখন এরা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে ইস্যু তুলে দিতে এমন করেছে কীনা সে কথাও বলা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, সরকার জেনেশুনেও অনেককিছু মুখ ফুটে বলতে পারছে না। ইলিয়াস আলীর সঙ্গে সুরঞ্জিতের ঘটনাও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ইলিয়াস আলীর গাড়িচালক আনসার আর সুরঞ্জিতের এপিএসের গাড়িচালক আজমের বন্ধুত্ব উল্লেখ করে বলা হয়েছে এপিএস’র গাড়িতে থাকা সত্তুর লাখ টাকা ধরিয়ে দিতে তারা কাজ করতে পারে। এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবার নয়। কিন্তু একইসঙ্গে একথাগুলোও কেউ বলছে না যে আনসার আসলে সে রকম পেশাদার গাড়িচালক নন। তিনি ইলিয়াস আলীর ভাইপো। আর এপিএস ফারুকের গাড়িচালক আজম তবলীগ জামায়াতের লোক। কেলেংকারি ধরা পড়ার পর যাকে মাদকাসক্ত(!), অপহরনকারী(!) বলে আড়াল করতে চেয়েছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত!
আবার এ কথাও ঠিক, ইলিয়াসের ঘটনায় এখন সবচেয়ে স্বস্তিতে আছেন সুরঞ্জিত দাদা! সবাই এখন তার ইস্যুটি বাদ দিয়ে ইলিয়াস আলীর ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত! এ কথাটি বেশ গুছিয়ে বলেছেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টর রফিকুল হক। ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেছেন, সুরঞ্জিত ইস্যু আড়াল করতে ইলিয়াস ইস্যুর সৃষ্টি করা হয়েছে। এখন এ ইস্যু আড়াল করতে আর কোন ইস্যুর সৃষ্টি করা হয় কে জানে!
ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারে র্যাব-পুলিশ যখন মিসেস ইলিয়াসকে নিয়ে পুবাইল যায়, তখন একটি সূত্র থেকে বলা হয়, বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য একটি সম্মানজনক ওয়ে আউট খোঁজা হচ্ছে। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হবার পর সরকার যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে, তিনি বেরিয়ে এসে আবার কোনো বিশেষ বিবৃতি বা কাহিনী বললে সংশ্লিষ্ট সংস্থা তথা সরকারের জন্য তা আরও বিব্রতকর হবে। এজন্যে ভবিষ্যতে ইলিয়াস বেরিয়ে এলে তেমন কিছু করবেন না এ ব্যাপারে মিসেস ইলিয়াসের কাছে লিখিত প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয়। স্বামী আর তাদের সন্তানদের পিতার জীবনের বিনিময়ে যেকোন শর্তে রাজি হয়েছিলেন মিসেস ইলিয়াস। কিন্তু সূত্রমতে খালেদা জিয়া এসব শর্তে রাজি হননি। মিসেস ইলিয়াস তথা তাহসিনা রুশদি লুনা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তিনি তার অবস্থান জানিয়ে দেন। এভাবে র্যাবের সঙ্গে অভিযানে যাওয়ায় হরতালে প্রভাব পড়তে পারে বিধায় এ নিয়েও তোপের মুখে পড়েন লুনা। এর কারণে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসে তিনি র্যাবের সঙ্গে অভিযানে যাবার বিষয়টিও অস্বীকার করে বসেন।
সূত্রগুলোর মতে, ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার তথা তার বেরিয়ে আসার সম্ভাবনার বিষয়টি এভাবেই থেমে যায় শনিবার রাতে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা তথা সরকারের ইজ্জত, খালেদা জিয়ার ইস্যু-- কোনটা জয়ী হবে, এর দরকষাকষির শিকার হয়ে গেছেন সিলেট বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী! এরপর আমাকে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, তা যেন সত্যি না হয়।
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময় : ১৭৪৮ ঘণ্টা, ২২ এপ্রিল, ২০১২
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।